মহামারিকালে অনলাইন ব্যবসায় এসে জেগে উঠেছে শতরঞ্জি শিল্প
মহামারির আঘাতে দেশের সব খাতে বিরূপ প্রভাব দেখা গেলেও সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা গেছে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি খাতে।
২০২০ সালে মহামারির আঘাতের আগ পর্যন্তও বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের ক্ষুদ্র পরিসরের এ খাত ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল। কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউন শুরুর পর থেকেই প্রথমবারের মতো পণ্যটি নিয়ে অনলাইনে আসেন শতরঞ্জি বুনন শিল্পীরা।
মহামারি শুরুর ২২ মাস পর এসে দেখা যাচ্ছে শতরঞ্জির খাতে মহামারির প্রভাব গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করেছে। ধুকতে থাকা এ শিল্প এখন পুর্নোদ্দমে জেগে উঠছে।
মহামারির আগে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা রংপুরে শতরঞ্জি তৈরির কারখানা ছিল মাত্র চারটি। এখন মোট ৬০টি কারখানায় তৈরি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ পণ্য, বেশিরভাগ উদ্যোক্তারাই নারী।
শতরঞ্জি নিয়ে কাজ করছেন এমন একজন উদ্যোক্তা মনিরা বেগম আদরি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রায় ৬০ শতাংশ বিক্রিই হয় ফেসবুক পেজের মাধ্যমে, বাকি ৪০ শতাংশ অফলাইনে,"
বর্তমানে মনিরা বেগমের শতরঞ্জি তৈরির ইউনিট আছে চারটি তার অধীনে কাজ করছেন ২০০ জন কর্মী। মহামারির আগে তিনি তার পারিবারিক ছোট কারখানায় শতরঞ্জি বানাতেন।
২০২১ সালেই ২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন তিনি।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, রংপুরের শতরঞ্জির ঐতিহ্য ৭০০ বছরের পুরনো, বর্তমানে ৭১টি দেশে বিক্রি হচ্ছে এই পণ্য।
রংপুরভিত্তিক আরেকজন তরুণ উদ্যোক্তা স্বপ্না রানি সেন বলেন, "দেশ-বিদেশে শতরঞ্জির অনলাইন ও অফলাইনের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমার ব্যবসা বেশ ভালো চলছে এখন,"
শতরঞ্জি বানানোর প্রধান কাঁচামাল পাট, উলের সুতা, তুলা আর কাপড়ের বর্জ্য। স্থানীয় বাজার থেকে এসব কেনার পর শিল্পীরা এসব রং করে শুকাতে দেন।
এক বর্গ ফুটের শতরঞ্জি বুনতে সময় লাগে ১-৩ ঘণ্টা। আকার, কাপড়ের ধরন আর রঙের ওপর নির্ভর করে দাম পড়ে ১৫০ টাকা- ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ১৯৭৮ সালে রংপুরের একটি গ্রামে শতরঞ্জি বানানোর একটি প্রকল্প হাতে নেয়। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আর্টিজানদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল প্রশিক্ষণ কর্মশালা। কিন্তু এ প্রকল্প কাঙ্ক্ষিত সফলতার মুখ দেখেনি।
অনলাইনে বিক্রি শুরু করে এ খাত নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়ার পর বর্তমানে ২৫ হাজার উদ্যোক্তা আর কর্মী কাজ করছেন এ খাতে।
রংপুরের আধ ডজন শতরঞ্জি নির্মাতার সঙ্গে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের। অটোমেশন চালুর জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই ফাউন্ডেশন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো মাফিজুর রহমান টিবিএস-কে বলেন, ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য একটি কমন প্লাটফর্ম গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন তারা।
তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোতে কম খরচে রংপুরের শতরঞ্জি ক্লাস্টারে ঋণ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।