২০২৩ নাগাদ দিনে ৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস যোগ করতে চায় বাপেক্স
২০২৩ সাল নাগাদ নিজেদের স্বল্পমেয়াদী অনুসন্ধানী কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস যোগ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।
এই লক্ষ্য পূরণ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান ও উৎপাদন কোম্পানিটি তাদের নিজেদের নির্ধারিত এবং অন্যান্য উৎপাদন কোম্পানির এলাকায় ২২টি কূপ খনন করবে।
এক সাম্প্রতিক মিটিংয়ে বাপেক্স কর্মকর্তারা তাদের বর্তমান কার্যক্রম, অর্জন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার খতিয়ান তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সামনে।
"আমরা যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আশা করা যাচ্ছে ২০২৩ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রিডে আরও ৩০০ এমএমসিএফ গ্যাস যোগ করতে পারব," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
"গত বছর আমরা ইতোমধ্যেই জাতীয় গ্রিডে ১১১ এমএমসিএফডি [মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট পার ডে] গ্যাস যুক্ত করেছি," আলী জানান।
বাপেক্স জানিয়েছে, স্বল্পমেয়াদে তারা শরীয়তপুর-১, শিকরাইল নর্থ-১, টবগি-১ ও ইলিশা-১ এ অনুসন্ধানী কূপ খননের পরিকল্পনা করেছে। এতে করে তারা গ্রিডে ৬৫ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ করতে পারবে।
তাছাড়া গ্যাস অনুসন্ধানী কোম্পানিটি বেগমগঞ্জ-৪ ওয়েস্ট, শুন্দুলপুর-৩, শিকরাইল-৫, সুমেতাং-৭ ও ভোলা নর্থ-২ এ পাঁচটি উন্নয়ন কূপ খননেরও পরিকল্পনা করছে। তাদের আশা, এই কূপগুলো ৬৪ এমএমসিএফডি গ্যাস জোগান দেবে।
পাশাপাশি বাপেক্স ফেঞ্চুগঞ্জ-৩, শালদানদী-২, সুমেতাং-৫ ও ছয়টি আলাদা কূপে চারটি কূপ ওয়ার্কওভারও খনন করতে চাইছে। এসব ওয়ার্কওভারের সাহায্যে একটি কূপের আয়ুষ্কাল দীর্ঘায়িত করা যায়। এটি করা সম্ভব হলেও ৩০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর এলাকাগুলোয় রাষ্ট্রায়ত্ত অনুসন্ধানী কোম্পানিগুলো আরও নয়টি উন্নয়ন ও কূপ ওয়ার্কওভার খনন করবে।
বাপেক্স আশা করছে, এই কূপগুলো থেকে সর্বমোট ১০৪ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন করা যাবে।
স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় ক্রমাগত উৎপাদন কমতে থাকায় গ্যাসের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। এর ফলে সরকার বাধ্য হচ্ছে বিদেশ থেকে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করতে।
বর্তমানে জাতীয় গ্যাস ট্রান্সমিশন গ্রিডে ৬৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে সরকার এলপিজি আমদানি করে থাকে। দেশে গ্যাস উৎপাদনে যে খরচ হয়, আমদানিতে খরচ হয় তার সাত থেকে দশগুন। এতে করে জ্বালানি বিভাগের উপর ভর্তুকি চাপ বেড়েই চলেছে।
এই চাপ প্রশমনের লক্ষ্যেই বাপেক্স স্বল্পমেয়াদী গ্যাস অনুসন্ধানের প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে।
এই মুহূর্তে বাপেক্স উৎপাদন করে ১৪৯ এমএমসিএফডি গ্যাস। অন্যদিকে দেশের মোট গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ২,৭০০ এমএমসিএফডি-র আশেপাশে।
এর মধ্যে, বিজিএফসিএল উৎপাদন করে ৬৩০ এমএমসিএফডি এবং এসজিএফএল উৎপাদন করে ৮৭ এমএমসিএফডি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভ্রন ও টুলো উৎপাদন করে ১,৪৩২ এমএমসিএফডি।
অবশিষ্ট গ্যাস আমদানি করে আনা হয় বিদেশ থেকে।
২০২১ সালে ১১১ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ করেছে বাপেক্স
গত বছর বেশ কিছু ওয়ার্কওভার ও নতুন কূপগুলোর ফ্রেশ ড্রিলিংয়ের সাহায্যে বাপেক্স জাতীয় গ্রিডে ১১১ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ করেছে।
এর মধ্যে ৯১ এমএমসিএফডি উৎপাদিত হয়েছে পাঁচটি ওয়ার্কওভার কূপ থেকে। তাদের মধ্যে ২৫ এমএমসিএফ এসেছে শাবাজপুর-৩, শিকরাইল-৪, ফেঞ্চুগঞ্জ-৩ ও ৪ এবং তিতাস-৭ থেকে।
এর বাইরেও, সিলেট-৮ ও ০ এবং শিকরাইল ইস্ট-১ এর তিনটি নতুন খননকৃত কূপ থেকে ২০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদিত হয়েছে।