সুদের হার কম, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের টাকা তুলে নিচ্ছে গ্রাহকরা
অধিক মুনাফার আশায় ব্যাংকে আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের প্রতি কয়েক বছর যাবৎ আগ্রহ বেশি ছিল গ্রাহকদের। গত সেপ্টেম্বরে সকল ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমানোর ফলে বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
ফলে গত ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রে ঋণের তুলনায় আগের ঋণের মূল ও মুনাফা পরিশোধ বেশি করেছে সরকার। এ সময় সঞ্চয়পত্র বিক্রির তুলনায় পরিশোধ ৪৩৬ কোটি টাকা, যা ১৮ মাস পর প্রথম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে ৭৮৯৮ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন গ্রাহকরা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে ৭৩৬২ কোটি টাকা।
এর আগে অক্টোবরে গ্রাহকরা তুলেছেন ৭৯৫৬ কোটি। নভেম্বরে তুলেছেন ৮২৪০ কোটি টাকা। এ সময়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন যথাক্রমে ৮৭২২ এবং ৮৯৪১ কোটি টাকা। তিন মাসেই বিনিয়োগের তুলনায় গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন ধারাবাহিকভাবে কমেছে।
এর আগে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও পরিশোধ নিট ঋণ নেগেটিভ অবস্থানে গিয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে। ওই মাসে সরকার সঞ্চয়পত্রের মোট বিনিয়োগের তুলনায় ৬২২ কোটি টাকা বেশি মূল ও মুনাফা পরিশোধ শেষে নিট ব্যয় করেছিল।
চলতি অর্থবছরের আগস্টে সরকারের সঞ্চয়পত্রে নীট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৬২৮ কোটি টাকা। এক মাস পর সেপ্টেম্বরে নীট ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ২৮২৫ কোটি টাকা, অক্টোবরে এসে ব্যাপক কমে নীট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬৬ কোটি টাকা। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে নভেম্বরেও। নভেম্বরে নীট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এসে একটাও নীট ঋণ না নিয়ে পরিশোধ বেশি করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "সরকারের সঞ্চয়পত্রের ঋণের পরিমাণ কমছে এটা ভালো দিক কারণ এ খাতে অধিক সুদ দিতে হয়। তবে কম সুদে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণ বাড়ালে সরকারের জন্য ভালো হবে"।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে অনেকে বেনামি সঞ্চয়পত্র কিনতেন। এখন সেটা কোনভাবে প্রমাণিত হলে জেল জরিমানা হতে পারে। সে কারণেও এ খাতে বিক্রি ও সরকারের নীট ঋণ কম।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১ শতাংশ এবং ৩০ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা বা এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয় সরকার।