ফিফা বিশ্বকাপের জন্য চট্টগ্রামের সনেট টেক্সটাইলে তৈরি হচ্ছে ৬ লাখ টি-শার্ট
চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার সনেট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সাততলা ভবনের চতুর্থ তলায় দারুণ ব্যস্ততা। কাটিং, সুইং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ফিনিশিং, প্যাকেজিং সহ সব বিভাগের কর্মীদের যেন দম ফেলার সময় নেই। কালো, সাদা, হলুদ, কমলা বেগুনি সহ মোট ছয় রঙের ছয়টি ডিজাইনের টি-শার্ট তৈরীর কাজ চলছে। যেগুলো ২০২২ সালের ফিফা কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল টি-শার্ট হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এগুলোর কপিরাইট ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে ফিফা পোষাকপণ্য ও সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার স্পোর্টসমাস্টার। ২০২১ সালের জুলাইতে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের সনেট টেক্সটাইলকে দেড় মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের ৬ লাখ পিস টি-শার্টের অর্ডার দেয়।
এই ধারাবাহিকতায় সনেট টেক্সটাইল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করে টি-শার্ট উৎপাদনের কাজ। ইতোমধ্যে ৩ লাখ পিস তৈরী করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে করে রাশিয়ায় বিদেশি ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকি ৩ লাখ পিস মার্চের শেষ দিকে পাঠানো হবে।
এই টি-শার্টগুলো রাশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্পোর্টসমাস্টারের নিজস্ব শোরুমে বিক্রি হবে। স্পোর্টসমাস্টারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাশিয়া, বেলারুশ, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং আর্মেনিয়ায় ৬৬০টিরও বেশি নিজস্ব স্টোর রয়েছে তাদের।
আগামী ২১ নভেম্বর কাতারে শুরু হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবলের এই আসর চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সনেট টেক্সটাইল ২০১৮ সালে একই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফিফা বিশ্বকাপের জন্য ২ লাখ পিস টি-শার্ট ও জ্যাকেট সরবরাহ করে। পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় ২০২০ সালের ইউরো কাপের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার পিস টি-শার্ট সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। একই ধরাবাহিকতায় স্পোর্টসমাস্টার ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য ৬ লাখ পিস টি-শার্টের অর্ডার দেয়। আগামী ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলের জার্সি তৈরীর পরিকল্পনাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার সনেট টেক্সটাইলে দেখা যায় ৭ তলা ভবনের চতুর্থ তলায় চলছে সেলাই, কোয়ালিটি মনিটরিংয়ের কাজ। তৃতীয় তলায় চলছে ফিনিশিং এবং প্যাকেজিং। বয়স, ওমেন এবং মেনস ক্যাটাগরির কালো, সাদা, হলুদ, কমলা বেগুনিসহ মোট ছয় রঙের ছয়টি ডিজাইন ও সাইজে তৈরী হচ্ছে টি-শার্ট। টি-শার্টে লেখা আছে 'ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ কাতার ২০২২', আছে স্টেডিয়ামের ছবি সম্বলিত 'ফুটবল ইজ আমেজিং' এবং 'প্লে' লেখা স্কেচ।
সনেট টেক্সটাইলের পরিচালক এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, 'এই অর্ডারটি আমরা গত বছর সংগ্রহ করেছি। এরপর কার্যক্রম শুরু করে ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদনে যাই। ৫০ শতাংশ শিপমেন্ট আমরা করে দিয়েছি। টি-শার্টগুলো আমাদের রাশিয়ান ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের স্টোরে নিয়ে বিক্রি করবে। এটি ফিফার লাইসেন্স প্রোডাক্ট। এটি অন্য কোথাও সেল করার সুযোগ নেই।'
'বৈশ্বিক ফুটবল আসরের অফিসিয়াল টি-শার্ট প্রস্তুত করতে পেরে বাংলাদেশি গার্মেন্টস মালিক হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। আমার সাথে যারা কাজ করছে সবাই খুশি', যোগ করেন তিনি।
সনেট টেক্সটাইলের কাটিং ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন বলেন, 'ফিফার অফিয়াল টি-শার্টে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা রয়েছে। এটি আমাদের দেশের জন্য গর্বের। আর এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে। তাই কাটিং থেকে শুরু করে ফিনিশিং-প্যাকেজিং পর্যন্ত সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে আমরা কাজ করছি।'
সহকারী কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর মনিরা আক্তার বলেন, 'এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত সকল কর্মী অত্যন্ত আন্তরিকার সাথে কাজ করছে। কাজের কোয়ালিটিও ভালো হচ্ছে।'
চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গায় সনেট টেক্সটাইলের কারখানায় ৮০০ শ্রমিক কাজ করে। এছাড়া কালুরঘাট এলাকায় আরেকটি কারখানায় রয়েছে আরো ১ হাজার শ্রমিক। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক রপ্তানি ২ কোটি ডলার। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ১০-১২টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানে নীট জাতীয় পণ্য সরবরাহ করে এই প্রতিষ্ঠান।