ফেব্রুয়ারিতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় বেড়েছে ৫৭.৯ শতাংশ
অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৫.৯ বিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় ছিল ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, কোভিড সংক্রান্ত বাজেট সহায়তা ও টিকা সংশ্লিষ্ট ঋণের কারণে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
তবে প্রকল্প সহায়তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সক্ষমতা তেমন বাড়েনি।
চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। কিন্ত চাহিদা কম থাকায় সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নির্মাণ সামগ্রির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অবকাঠামো খাতের কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে পারে অর্থছাড়েও। তবে নির্মাণ কাজ নেই এমন প্রকল্পে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো যদি ব্যয় করতে পারে তাহলে অর্থছাড় বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "প্রকল্প সহায়তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। এ কারণে প্রকল্প সহায়তা ব্যবহারের গতি বাড়ানো যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের অর্থছাড় বেড়েছে মূলত কোভিড সংক্রান্ত অর্থায়নের কারণে।"
তিনি বলেন, "ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে নির্মাণ সামগ্রিক দাম বাড়লেও যদি সঠিক কৌশলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে অর্থছাড়ও বাড়ানো সম্ভব।"
অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। ম্যানিলা ভিত্তিক এই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ১.৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থছাড় করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১.৩ বিলিয়ন অর্থছাড় করেছে জাপান। বিশ্বব্যাংক ৭১১ মিলিয়ন এবং ৭০১ মিলিয়ন অর্থছাড় করেছে রাশিয়া। এছাড়া চীন ছাড় করেছে ৪৯৭ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে অর্থছাড়ের সঙ্গে সঙ্গে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। ২২.২৬ শতাংশ বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এই সময়ে।
ইআরডির প্রতিবেদনে অনুযায়ী, অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ছিল ৩.৯ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহেদ হোসেন বলেন, "কোভিড সংক্রান্ত অর্থায়নের কারণে প্রতিশ্রুতি বাড়ছে। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে আগামী কয়েক বছর প্রতিশ্রুতি ক্রমান্বয়ে বাড়বে।"
অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে চীনের কাছ থেকে। দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার পর ঢাকা-আশুলিয়া এক্সেপ্রেসওয়ে প্রকল্পে দেশটির সঙ্গে সরকারে ঋণ চুক্তি হয়েছে। এ কারণে চীন থেকে ১.১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২২ মিলিয়ন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৭৯৫ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ৫১৫ মিলিয়ন ডলার এবং জাপানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে ৩৮০ মিলিয়ন ডলারের।
এদিকে আলোচ্য সময়ে সরকারের ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের হারও বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে সরকার আসল ও সুদ বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের ১.৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে পরিশোধের হার ছিল ১.২ বিলিয়ন ডলার।