টেক্সটাইল ও আইটি খাতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ইয়ংওয়ান
টেক্সটাইল ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান আগামী কয়েক বছরে কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (কেইপিজেড) ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কিহাক সাং।
প্রতিষ্ঠানটি ১০০ একর জায়গাজুড়ে একটি অত্যাধুনিক হাইটেক পার্ক স্থাপন করছে, যেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে জানান সাং। পাঁচটি ভবনের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং খুব শিগগিরই আরও কয়েকটি ভবন নির্মিত হবে।
ইয়ংওয়ান করপোরেশনের মালিকানাধীন কেইপিজেড আরও ৫০ একর জমি নিয়ে কাজ করছে, যেখানে ২২ তলার একটি আইটি ভবন থাকবে। এই পার্ক বা কমপ্লেক্সটিতে বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট সুবিধা ছাড়াও সুউচ্চ আইটি ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল এবং কমিউনিটি পরিষেবাসহ অ্যাপার্টমেন্টও থাকবে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে হাইটেক পার্কটি- শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করবে।
"সম্ভবত আমরা বাংলাদেশ থেকেই সারা বিশ্বে আমাদের বাকিসব কারখানায় আইটি সহায়তা প্রদান করব," বলেন কিহাক সান।
বর্তমানে কেইপিজেডে ৪০টি অত্যাধুনিক সবুজ কারখানা রয়েছে। এছাড়া, আরও ৩৫টি কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
ইপিজেডের টেক্সটাইল জোনে, পরিকল্পনাধীন পাঁচটি কারখানার মধ্যে তিনটির কাজ শেষ হয়েছে। পাঁচটি কারখানাই সম্পন্ন হলে, জোনটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল হাব হিসেবে উচ্চমানের কৃত্রিম তন্তু (এমএমএফ) উৎপাদন ও সরবরাহ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশি পোশাক শিল্প নির্মাতারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা ব্যবহারের মাধ্যমে, আরও মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করতে পারবে।
কৃত্রিম তন্তুর মধ্যে আছে পলিয়েস্টার, রেয়ন ও সিন্থেটিক উল। ইয়ংওয়ান বর্তমানে এই ব্যবসা থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। সাং আশা করেন, আগামী পাঁচ বছরে খাতটি অর্ধ-বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় রূপান্তরিত হবে।
ইয়ংওয়ান ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। দেশের অধিকাংশ গার্মেন্ট নির্মাতাদের তুলনায় তাদের মূল্য সংযোজনও বেশি। সবগুলো ইউনিট মিলিয়ে ইয়ংওয়ান ৫৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে। কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক কিছু পণ্য আরও বেশি মূল্য সংযোজন যোগ করে। যেমন, নর্থ ফেসের বিশ্বখ্যাত নাপসি জ্যাকেটগুলো সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে তৈরি। ফলে এর রপ্তানি আয় থেকে ৮৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কেইপিজেড, বাংলাদেশের বৃহত্তম বেসরকারি ইপিজেড। ১৯৯৬ সালে ইপিজেডটি অনুমোদন লাভ করে। ১৯৯৯ সাল নাগাদ ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেও, এরপর অবকাঠামোগত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নীতি সহায়তার অভাবে এর কাজ ধীর গতিতে আগায়।
গত মাসের শেষে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিহাক সাং বলেন, "সরকারের সহায়তায়, গত দুই বছরে আমরা বড় ধরনের সাফল্য দেখতে পাচ্ছি।"
তবে তিনি আরও জানান, "আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, তার সবগুলো সমাধান হয়নি। তবে বড় কিছু পরিবর্তন এসেছে।"
"কেইপিজেডে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ দিবে। আমরা আমাদের ব্যবসা পুনর্নির্মাণ করছি। ডিজাইন ও ডেভলপমেন্টের জন্য আমাদের রয়েছে ১০টি কেন্দ্র, যার তিনটি সম্পন্ন হয়েছে ও সাতটি নির্মাণাধীন," বলেন তিনি।
বড় কারখানায় নিয়ে যাওয়ার ডিজাইন তৈরি করার বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করতে নিয়োজিত ছোট ইউনিটগুলোর বিকাশ ঘটিয়ে সেখানকার পণ্য ও সেবা বাজারজাত করতে চাই। আমি ১০টি ছোট ব্যবসায়িক ইউনিট বিকাশ করতে চাই, যেগুলো বড় পরিসরে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে উৎপাদন করতে পারবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে সাং বলেন, "সস্তা পণ্যের ওপর নির্ভর করে প্রবৃদ্ধির দরকার নেই। বরং উচ্চমানের পণ্য দ্রুত সরবরাহের মাধ্যমে, পরিষেবার মান বিকাশের পাশাপাশি ভাবমূর্তি বজায় রাখতে হবে। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও সরকার মিলিতভাবে কীভাবে কাজ করতে পারে- এটা তার ওপর নির্ভর করে। এছাড়া, পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা ও করপোরেট গভর্ন্যান্স (ইসিজি), পণ্যের মান ও চালানের মতো দিকগুলো মাথায় রেখে কীভাবে আমরা বাংলাদেশি পণ্যের ভাবমূর্তি বাড়াতে পারি- তার ওপরও অনেককিছু নির্ভর করছে। কম সময়ে আমাদের অনেক কিছু অর্জন করতে হবে। এছাড়াও, আমাদের কৃত্রিম তন্তুর মানোন্নয়নের পাশাপাশি তুলার আধিপত্যও বজায় রাখতে হবে।"
"বাংলাদেশের যেমন মানবসম্পদ রয়েছে, তেমনি আছে সফলতার ইতিহাস। ভিয়েতনাম, চীন ও বাংলাদেশ- এই তিন দেশের নাম যেন একসাথে উচ্চারিত হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোনো উচিত। পরিমাণগত অর্জনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং পুনঃবিনিয়োগের জন্য টেকসই মুনাফা অর্জনে মনোযোগ দেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। গার্মেন্টস ব্যবসা থেকে মনোযোগ সরানো উচিত নয়। বাংলাদেশের জন্য গার্মেন্টস ব্যবসা এখনও লাভ ও সুবিধাজনক। তবে এর সাফল্য অনুসরণ করে, ইলেকট্রনিক্সের মতো অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা উচিত," বলেন তিনি।
নর্থফেস (কোরিয়ায় নর্থফেস চালানোর স্বত্বাধিকার ইয়ংওয়ানের) কোরিয়ার ৫০ কোটি ডলারের ব্যবসাসহ ইয়ংওয়ানের বার্ষিক টার্নওভার ৩০০ কোটি ডলার। এই আয়ের এক-তৃতীয়াংশ আসে বাংলাদেশ থেকে। আয়ের বাকি অংশ ভিয়েতনাম ও অন্যান্য দেশের কার্যক্রম থেকে আসে।