বাড়তি দামে স্থবির রড ও স্ক্র্যাপের বাজার
বাড়তি দামে স্থবির হয়ে আছে নির্মাণ পণ্য এমএস রড ও পণ্যটির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের বাজার। আগের চেয়ে চাহিদা ও বিক্রি কমে যাওয়ায় পণ্য দুটির দাম কমেছে টনে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা। গত দেড় বছর ধরে টানা বৃদ্ধি পেয়ে রডের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার পর পণ্যটির ব্যবহার কমে যাওয়ায় রড ও স্ক্র্যাপের বাজার স্থবির হয়ে আছে বলে মনে করছেন এই খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।
গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম কমেছে ২০-৩০ ডলার। এতে গত দুই-তিন সপ্তাহে মানভেদে রডের দাম কমেছে টনে ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কিন্তু রডের দাম সর্বোচ্চ চূঁড়ায় পৌঁছার পর গত দেড়-দুই মাস ধরে রডের বিক্রি ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। কিছু সরকারি প্রকল্প ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে রডের চাহিদা একদম নেই বললেই চলে।'
তিনি আরো বলেন, 'গোল্ডেন ও এইচএম সিল মিলে আগে আমাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টন রড বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে দুইটি কারখানা থেকে রড বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫০-৩০০ টন।'
কেএসআরএম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং এন্ড সেলস) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, 'রমজান এবং ঈদকে ঘিরে তারল্য সংকট এবং জরুরী খরচ মেটাতে লোকাল মার্কেটে মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম কিছুটা কমেছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম তেমন কমেনি। একই সময়ে রডের দামও কিছুটা কমেছে।
স্ক্র্যাপ ও রডের দাম কমার কারণে ক্রেতা ও ডিলারদের ধারণা রডের দাম আরো কমতে পারে। এই ধারণা থেকে পণ্যটির চাহিদা ও বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।' তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হলে সরবরাহ সংকটে স্ক্র্যাপের দাম আরো বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
গত দুই সপ্তাহে ইস্পাতের বাজারে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে ৭৫ গ্রেডের (৫০০ টিএমটি) রডের দাম। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতি টন ৭৫ গ্রেডের রড বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ৮৭-৯১ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
মঙ্গলবার বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের (টিএমটি) বিএসআরএম ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, কেএসআরএম ৮৭ হাজার টাকা, একেএস ও জিপিএইচ ৮৬ হাজার টাকা, গোল্ডেন, এসএএসএম ও বায়েজিদ ৮৫ হাজার টাকা এবং এইচএম স্টিল ৮৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে সেমি অটো মিলের ৬০ গ্রেডের (৫০০ ওয়াট) রডের দামও ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে বাজারে ৬০ গ্রেডের শীতলপুর স্টিলের সেমি অটো এমএস রড প্রতি টন ৮২ হাজার টাকা, বিএম, আল ছাফা, রাইজিং, খলিল, বলাকা, আম্বিয়া, পেনিনসুলা ও মানতি স্টিলের রড ৮১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ইস্পাতের পাশাপাশি ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল বিলেট, প্লেইট ও স্ক্র্যাপের দামও কমে গেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৫৮ হাজার টাকা, প্লেট ৬৫ হাজার টাকা এবং বিলেট ৭২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহে আগে স্ক্র্যাপ ৬৫ হাজার টাকা, প্লেট ৭১ হাজার টাকা এবং বিলেট ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর টানা উর্ধ্বমুখী ছিল রডের বাজার। এই সময় দফায় দফায় বেড়ে পণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এভাবে দাম বৃদ্ধির ফলে নির্মাণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় আবাসন ও অন্যান্য খাতের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চাহিদা কমে যাওয়ায় পণ্যটির বিক্রি কমে গেছে। কমেছে পণ্যটির দামও।
চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারি রড ব্যবসায়ী মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টন রড বিক্রি হয়। যা চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে যায়। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে রডের বিক্রি কমে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে রড বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০-৩০ টন।'
এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, 'রডের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বেশিরভাগ লোকজন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়লেও সরকারি প্রকল্পের দাম সমন্বয় না করায় বহু সরকারি প্রকল্পের কাজও স্থবির হয়ে আছে। ফলে আগের চেয়ে পণ্যটির চাহিদা ও বিক্রি কমে গেছে।'
কেআর স্টিলের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, সরবরাহ সংকটের কারণে গত দেড় বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম দফায় দফায় বেড়ে ৪০০ ডলার থেকে ৬৮০ ডলারে পৌঁছে। এতে দেশীয় বাজারে স্ক্র্যাপ ও রডের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম কিছুটা কমে এখন ৬৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে দেশীয় বাজারে রডের চাহিদা ও বিক্রি কমে গেছে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে রড ও স্ক্র্যাপের বাজার। তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক সময়ে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে ১৫-১৬ লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ মজুদ থাকলেও বর্তমানে স্ক্র্যাপ মজুদ রয়েছে মাত্র ৭ লাখ মেট্রিক টন।