চলতি বছর থেকেই ব্যাংক থেকে আপনার বিমা করতে পারবেন
চলতি বছরের শেষ দিক থেকেই দেশে চালু হতে যাচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিমাপণ্য বিক্রির ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবস্থা। এরই মধ্যে সেবাটির গাইডলাইন চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির অংশীদারত্বে পরিচালিত এ সেবা চালু হলে উভয় খাতই লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যবস্থায় একটি বিমা কোম্পানি তার অংশীদার ব্যাংকের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকের কাছে তার পণ্য বিক্রি করতে পারবে। ফলে ব্যাংকের আয়ও বাড়বে।
মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ এশীয় দেশগুলোতে ব্যাংকাস্যুরেন্সের জনপ্রিয়তার ক্রমেই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী এর বাজার ক্রমাগত বড় হচ্ছে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য চূড়ান্ত গাইডলাইন তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কারিগরি কমিটি কাজ করছে।
কারিগরি কমিটির সদস্য ও পিডব্লিউসি বাংলাদেশের সহযোগী পরিচালক সাদেক-উজ-জামান বলেন, 'মানুষের আস্থা ও আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একটি সর্বোত্তম আইন প্রণয়নের কাজ হচ্ছে। মূল গাইডলাইনটি বাংলাদেশ ব্যাংক করেছে। এর ওপর আইডিআরএসহ সব পক্ষের মতামতও নেয়া হয়েছে। এখন আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দুই-তিন মাসের মধ্যে খসড়া প্রকাশ করা হবে।'
ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে সব ব্যাংক তাদের সারা দেশের প্রায় ১১ হাজার শাখার মাধ্যমে বিমার পলিসি বিক্রি করতে পারবে। ব্যাংকগুলো তাদের অংশীদার বিমা কোম্পানির জন্য আলাদা একটি ডেস্ক স্থাপন করে পলিসি জমা নেবে। এতে বিমার গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি ব্যাংকের শাখায় এসে টাকা জমা দিতে ও তথ্য জানতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ব্যাংকের মাধ্যমে ইনস্যুরেন্স সুবিধা দেয়ার গাইডলাইনটি প্রায় চূড়ান্ত। কারিগরি কমিটি গাইডলাইন প্রণয়নে কাজ করছে। ব্যাংকগুলোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখছে, আর ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়টি দেখছে আইডিআরএ। নীতিমালা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।' চলতি বছরের মধ্যে এ সেবা চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যাংকাস্যুরেন্স একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিক্রি। ১৯৮০ সালের দিকে ফ্রান্স ও স্পেনে প্রথম ব্যাংকাস্যুরেন্স ধারণার উদ্ভব হয়। গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলো ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে তাদের পলিসি বিক্রিতে সাফল্য পেয়েছে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স পদ্ধতিতে একটি কার্যকর বিকল্প চ্যানেল হিসেবে কাজ করে ব্যাংক। এতে প্রিমিয়াম সংগ্রহে বিমা কোম্পানিগুলোর খরচ কম হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত কোনো খরচ ছাড়াই ব্যাংক তার গ্রাহকদের বিভিন্ন বিমা-সুবিধা দিতে পারে। তাছাড়া ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বেশি থাকায় গ্রাহকদেরও বিমা পলিসি কেনার প্রতি বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
ব্যাংক ও বিমা খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবস্থায় ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির মধ্যে সম্পাদিত অংশীদারি চুক্তির আওতায় ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের মধ্যে বিমা কোম্পানির পক্ষে বিমাপণ্য বিক্রি করবে। এতে ব্যাংকের কমিশন আয় বাড়বে। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির ব্যবসাও প্রসারিত হবে। ফলে উভয় প্রতিষ্ঠানই লাভবান হবে।
এছাড়া ব্যাংকগুলো বিমাপণ্য বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেলে তারা গ্রাহকদের ওয়ান স্টপ আর্থিক সেবা প্রদানে সক্ষম হবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজ দ্রুততর হওয়ার পাশাপাশি দেশের জিডিপিতে ব্যাংক ও বিমা খাতের অবদান বাড়বে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, 'ব্যাংকের মাধ্যমে বিমার ব্যবস্থাটি চালু হলে উভয়ের লাভ। আমরা বহু বছর ধরে এটি চালুর চেষ্টা করে আসছি। তবে বাংলাদেশে ব্যাংক অনুমোদন দিচ্ছিল না। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকই গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে।'
তিনি আরও বলেন, '[কেন্দ্রীয় ব্যাংক] আমাদের কাছে মতামত চেয়েছে। এরইমধ্যে কিছু সংশোধনীসহ মতামত পাঠিয়েছি। খুব শিগগিরই খসড়া প্রকাশ হবে বলে আমরা জেনেছি।'
গাইডলাইন চূড়ান্ত করার দায়িত্ব পাওয়া কারিগরি কমিটি মধ্য-মার্চে সর্বশেষ সভা করে।
কারিগরি কমিটির সদস্য ও পিডব্লিউসি বাংলাদেশের সহযোগী পরিচালক সাদেক-উজ-জামান বলেন, 'মানুষের আস্থা ও আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একটি সর্বোত্তম আইন প্রণয়নের কাজ হচ্ছে। মূল গাইডলাইনটি বাংলাদেশ ব্যাংক করেছে। এর ওপর আইডিআরএসহ সব পক্ষের মতামতও নেয়া হয়েছে। এখন আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দুই-তিন মাসের মধ্যে খসড়া প্রকাশ করা হবে।'
গাইডলাইনের আওতায় ইনস্যুরেন্স বিক্রি করতে ব্যাংকগুলোকে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এক বা একাধিক লাইফ ও নন-লাইফের ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট হিসেবে অনুমোদন দেওয়া যাবে ব্যাংকগুলোকে। পলিসি হোল্ডারদের থেকে সার্ভিস চার্জ বা অন্য কোনো ধরনের ফি নিতে পারবে না ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট। আইডিআরএর কমিশন কাঠামো অনুযায়ী ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টদের কমিশন দেবে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
বিমা কোম্পানি ও ব্যাংকের মধ্যকার ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তির আওতায় কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে ব্যাংকগুলোকে তাদের শাখা, টেলিমার্কেটিং কেন্দ্র, এজেন্ট ব্যাংকিং, ডিজিটাল মাধ্যম, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টধারী/ক্লায়েন্ট/জনসাধারণের কাছে বিমা-নীতির প্রস্তাব, বিজ্ঞাপন, বিক্রয়, বিতরণ বা বাজারজাত করতে হবে। ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতায় ব্যাংকগুলো লাইফ ও নন-লাইফ—উভয় বিমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে। বিমা এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যাংকাস্যুরেন্সের সম্ভাবনা
ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির অংশিদারত্বে কমিশনভিত্তিক আয় বাড়ার ফলে আয়ের নতুন পথ তৈরি হবে।
১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই দেশে এক শতাংশেরও কম মানুষের বিমা আছে। বিভিন্ন ইনস্যুরেন্স ক্রস সেল, আপ সেলের জন্য গ্রাহকদের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য আছে ব্যাংকগুলোর কাছে।
বাংলাদেশে মোট তফসিলি ব্যাংক আছে ৬০টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের তথ্যানুযায়ী, এসব ব্যাংকের মোট ১০ হাজার ৮০৩টি শাখা আছে। অন্যদিকে, দেশে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি আছে ৭৯টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তথ্যানুযায়ী, এসব কোম্পানির মোট এজেন্টসংখ্যা ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭২।
এছাড়া বাংলাদেশে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে বিমার আওতায় আনা সহজ হবে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে। বিমা করতে দেশব্যাপী ব্যাংকের শাখা থাকার সুফল মিলবে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে ব্যাংক-বিমা উভয় খাতই লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক হবে বলে মনে করছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে ইনস্যুরেন্সের একটা বড় সমস্যা হলো বিশ্বাস। ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকা ১১ কোটি মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমা সুবিধায় চলে আসবে। বিমা কোম্পানিগুলো বিপুলসংখ্যক গ্রাহক পাবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর সুদ-বহির্ভূত আয় বাড়বে।'
ব্যাংকাস্যুরেন্সের বৈশ্বিক অবস্থা
১৯৮০-র দশকে ইউরোপে উদ্ভূত হওয়া ব্যাংকাস্যুরেন্স এখন সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালে ব্যাংকাস্যুরেন্সের বৈশ্বিক বাজার ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ভৌগলিক ফ্রন্টে, অনুকূল কর কাঠামো থাকায় এ বাজারের শীর্ষস্থান দখল করেছে ইউরোপ। স্পেনে জীবনবিমার প্রিমিয়াম আয়ের ৬৫%, ফ্রান্সে ৬০%, বেলজিয়াম ও ইতালিতে ৫০% আসে ব্যাংকাস্যুরেন্স থেকে। এই দেশগুলোতে মাত্র দশ বছরে ব্যাংকাস্যুরেন্স একটি সফল মডেল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি পেয়েছে।
চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান বাজারগুলোতে ব্যাংকাস্যুরেন্স বাজারের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশগুলো ব্যাংকাস্যুরেন্স মডেলের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে উৎসাহিত করার জন্য উপযুক্ত নিয়ম গ্রহণ করেছে।
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ এশিয়াজুড়েই ব্যাংকাস্যুরেন্স সুপ্রতিষ্ঠিত। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মায়ানমারে ব্যাংকাস্যুরেন্স সুবিধা চালু রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও বিমার মাধ্যমে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
ব্যাংকাস্যুরেন্সের আইনি কাঠামো
দেশে আর্থিক খাতের জন্য কার্যকর ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের ইনস্যুরেন্স ব্যবসা করার সুযোগ নেই। তবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৭(৩) ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক কোম্পানি স্টক-ব্রোকার, স্টক-ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসেবে বা সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে নিবন্ধন গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে—এ ধরনের ব্যবসায় সরাসরি যু্ক্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কারিগরি কমিটির সদস্য জানিয়েছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ১২০(২)/(৩) ধারার আওতায় ব্যাংকগুলোর জন্য ব্যাংকাস্যুরেন্সের প্রবিধান প্রণয়ন ও প্রচার করার ক্ষমতা পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্যদিকে, বীমা আইন ২০১০-এর আওতায় নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে উপযুক্ত নিবন্ধন পাওয়ার পর কর্পোরেট সংস্থাগুলো 'বীমা এজেন্ট' হিসাবে কাজ করার অনুমতি পাবে। আইনটির ২(২৯) ধারার সংজ্ঞা অনুসারে 'বীমা এজেন্ট' অর্থ, এই আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তি, যিনি কমিশন বা অন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করে বা গ্রহণে সম্মত হয়ে বিমা পলিসি সচল, নবায়ন বা পুনরুজ্জীবিতকরণসহ বীমা ব্যবসা আহরণ ও সংগ্রহ করেন। ২(৩২) ধারা অনুসারে, 'ব্যক্তি' অর্থ যেকোনো ব্যক্তি ও কোনো প্রতিষ্ঠান, কোনো কোম্পানি, কোনো অংশীদারী কারবার, ফার্ম বা অন্য যেকোনো সংস্থাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
ব্যাংকাস্যুরেন্সের যত মডেল
ব্যাংকাস্যুরেন্স ব্যবসার জন্য একটি দেশ বেশ কিছু মডেল অবলম্বন করতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে রেগুলেটরি ও ট্যাক্স ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপ্তি, ঠিক কতটুকু পরিধি পর্যন্ত ব্যাংক ও বিমা সংশ্লিষ্টরা কাজ করতে ইচ্ছুক এবং দেশের ব্যাংকিং ও বিমা খাতের আকৃতি ও গঠন ইত্যাদির ওপর।
ক্রস শেয়ারহোল্ডিং-এর ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক ইচ্ছে করলে ওয়ান-স্টপ আর্থিক সার্ভিসের মাধ্যমে তার সেবায় বৈচিত্র্য আনতে পারে। আবার কোনো বিমা কোম্পানি চাইলে কোনো ব্যাংকের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ও সেবাগ্রহীতাদের লেভারেজ প্রদান করতে পারে। এর বাইরে কোনো ব্যাংক সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি বিমা কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে পারে। কোনো ব্যাংক চাইলে নিজেদের মালিকানাতেই নতুন একটি বিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা বা তৈরি করতে পারে। একটি কমন গ্রুপের মালিকানাধীন কোনো ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিও চাইলে তা করতে পারে।
পুরোপুরি সমন্বিত পদ্ধতিতে কাজ পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদানের সম্ভাব্যতা রয়েছে ব্যাংকান্স্যুরেন্স মডেলে। ব্যাংকগুলোর ইতিমধ্যে থাকা সেবাগ্রহীতাদের লেভারেজ, ওয়ান-স্টপ ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রোডাক্টস ইত্যাদি ক্ষেত্রেও উচ্চ সক্ষমতা রয়েছে এ মডেলের। তবে এসব কিছুর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পুঁজির বিনিয়োগ, ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ইত্যাদি। এছাড়া আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে নিয়মকানুনজনিত সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই।
দুর্বলতা
বিমা খাতে দক্ষ কর্মীর অভাব; ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিমা ব্যবসায় বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব; ব্যাংক ও বিমার পণ্য, কৌশল ও আয়ের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সাংস্কৃতিক পার্থক্য; ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখার মধ্যকার নেটওয়ার্কিংয়ে দুর্বলতা ইত্যাদি ব্যাংকাস্যুরেন্সের প্রধান দুর্বলতা।
ব্যাংকাস্যুরেন্স-বিষয়ক সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ সুবিধার ব্যবস্থাও বর্তমানে নেই।
এছাড়া আজকাল গ্রাহকরা ব্যাংকে যান কেবল টাকা রাখা বা তোলার মতো ছোটখাটো কাজের জন্য। কারণ, এটিএম ও ই-ব্যাংকিং সুবিধার জন্য বেশিরভাগ গ্রাহকই এখন আর ব্যাংকমুখী হন না।