যেভাবে দেশের প্রথম প্লাস্টিক চেয়ার আনলেন এন মোহাম্মদ
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিলো। হঠাৎ কাঠের ফোল্ডিং চেয়ার ভেঙ্গে রক্তাক্ত হয়ে গেলেন পাশে বসা এক প্রতিবেশি। এমন দুর্ঘটনা খুবই নাড়া দিলো নুর মোহাম্মদকে। চিন্তা করলেন কাঠের চেয়ারের জায়গায় যদি প্লাস্টিকের চেয়ার হতো তাহলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না। ঘটনাটি ১৯৮৪ সালের।
পোশাক কারখানা নির্মাণের জন্য নগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি জায়গা ক্রয় করেছিলেন নুর মোহাম্মদ। কাঠের চেয়ার ভেঙ্গে প্রতিবেশি আহত হওয়ার সেই ঘটনার পর চিন্তা করলেন পোশাক নয়, প্লাস্টিক কারখানা গড়ে তুলবেন তিনি। কয়েকজন কনসালট্যান্টের সাথে নিজের পরিকল্পনার কথাও জানালেন। সেই চিন্তা থেকে ১৯৮৪ সালে তিনি ছোট পরিসরে ১০টি মেশিন দিয়ে প্লাস্টিক কারখানা দেন। শুরুতে ম্যানোলা, হারপিক, ডেটল- এর বোতল প্রস্তুত করা শুরু করলেন।
প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১৯৮৯ সালে এমএস ফ্রেমের আর্মলেস উইথ প্লাস্টিক বডি চেয়ার বাজারে নিয়ে এলেন। এটি বাংলাদেশের বাজারে প্রথম প্লাস্টিকের চেয়ার। বিভিন্ন সামরিক বাহিনী ও প্রতিষ্ঠান এটি সরবরাহ নিতে শুরু করে। প্রচুর সাড়া পড়ে যায় এই চেয়ারের। কাঠের ফোল্ডিং চেয়ারের পরিবর্তে বিভিন্ন ডেকোরেশন প্রতিষ্ঠানও এই চেয়ার সংগ্রহ শুরু করে।
১৯৯০ সালে ফুল প্লাস্টিক চেয়ার বাজারে আনে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক। এই চেয়ারগুলো এখনো বাজারে আছে। এর তিন বছর পর বিভিন্ন কোম্পানি প্লাস্টিকের চেয়ার বাজারে আনতে থাকে।
বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পে এভাবেই এন মোহাম্মদ গ্রুপের পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে চট্টগ্রাম ভিত্তিক এই শিল্প গ্রুপটি। দেশের বাজারে এসব পণ্যের ২০ শতাংশ সরবরাহের পাশাপাশি জাপানেও রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাদেশের বাজারে প্রথম প্লাস্টিক চেয়ার নিয়ে আসা নুর মোহাম্মদ ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরবর্তী প্রজন্ম এই শিল্প গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ এবং আরব আমিরাতে এন মোহাম্মদ গ্রুপের অধীন ১০ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বাংলাদেশে এবং ২টি আরব আমিরাতে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ৩ হাজার শ্রমিক। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এসেট ভ্যালু ১ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। আরব আমিরাতের দুবাই, শারজাহ, আজমান, জেবল আলীতে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ৩০০ জন কর্মী কাজ করে। যার মধ্যে ১৩০ জন বাংলাদেশি।
আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পাক অটো রিবিল্ডিং এবং নুর জেনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, এন মোহাম্মদ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ, রহমান ট্রেডার্স, এন মোহাম্মদ ডোরস অ্যান্ড বোর্ড, বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপ, মেসার্স কুলসুমা প্লাস্টিক, এন মোহাম্মদ পলিমার, বিল্ড বেস্ট বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস।
প্লাস্টিক চেয়ারের মতো বাংলাদেশে ২০১২ সালে প্রথম উড প্লাস্টিক কম্পোজিট ডোর বাজারে নিয়ে আসে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক। এই পণ্যে এখনো মার্কেট লিড দিচ্ছে এন মোহাম্মদ। নুর মোহাম্মদের মৃত্যুর পর তার সন্তানরা এই ব্যবসার হাল ধরেছেন।
বর্তমানে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা পিভিসি এন্ড এইচডিপিই পাইপ ১৫ হাজার মেট্রিক টন, পিভিসি ফিটিং ১২ হাজার মেট্রিক টন, ডব্লিউপিসি এন্ড পিভিসি ডোর ৯ হাজার মেট্রিক টন, ডব্লিউপিসি এন্ড পিভিসি বোর্ড ৭ হাজার মেট্রিক টন, হাউজহোল্ড এন্ড ফার্নিশিং ১০ হাজার মেট্রিক টন, ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের বাজারে এসব পণ্যের ২০ শতাংশ যোগান দেয় এন মোহাম্মদ গ্রুপ।
বিল্ড বেস্ট বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস নামে একটি নতুন আউটলেট উদ্বোধন করতে যাচ্ছে এন মোহাম্মদ গ্রুপ। একই ছাদের নিচে সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী পাওয়া যাবে সেখানে।
মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ১০ একর জায়গায় শীঘ্রই গড়ে তোলা হবে একটি প্লাস্টিক কারখানা। যেখানে নতুন করে বিনিয়োগ হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ২ হাজার লোকের। ওই কারখানা থেকে প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।
অল্পবয়সেই সংগ্রাম শুরু
ছোট বয়সে বাবা-মাহারা হন নুর মোহাম্মদ। ফলে শিক্ষায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরোতে পারেননি। পড়াশোনার প্রতি প্রচুর আগ্রহ থাকা স্বত্ত্বেও শিশু বয়সেই মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। হাটহাজারী উপজেলার নজুমিয়াহাটের নিজ গ্রাম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতেন নগরীর একে খান এলাকার ওই কারখানায়। সৎ এবং সৃজনশীল হওয়ায় ওয়াকর্শপের মালিক খুবই পছন্দ করতেন নুর মোহাম্মদকে।
এক সময় ওয়ার্কশপের মালিককে পাকিস্তানের করাচিতে একজন মেকানিক পাঠানোর প্রস্তাব দেয় তার পরিচিত একজন। তখন তিনি নুর মোহাম্মদের নাম প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান নুর মোহাম্মদ। ১৯৬৪ সালে একটি পাস নিয়ে জাহাজে করে করাচি যান। পকেটে ছিল মাত্র ২ টাকা।
যে পাকিস্তানির অধীন নুর মোহাম্মদ কাজ করতেন, তিনি ছয় মাসের মধ্যে ওয়ার্কশপ পরিচালনার পুরো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। তখন তার বয়স ছিলো ১৬ বছর। দুই বছরের মধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জ সহ দামী গাড়ি রিপেয়ারের কাজ ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নেন। করাচিতে ২ বছর থাকার পর নুর মোহাম্মদ চলে যান দুবাইতে।
সেখানে নুর ইঞ্জিনিয়ারিং নামে গ্যারেজ এবং ওয়ার্কশপ দুটোই প্রতিষ্ঠা করেন। অনেক দূর থেকে গাড়ি আসা শুরু করলো। পরবর্তীতে কারখানার ওই জায়গা সরকার মসজিদ নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করে। বিষয়টি নিয়ে একজন গ্রাহকের সাথে কথা বলার পর তিনি বললেন, দুবাইয়ের পাশে শারজায় তার একটি জায়গা আছে। মরুভূমির ওই স্থানে কোন সড়ক ছিলোনা। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ১৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে পুনরায় নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ দেন। দুবাইতে নুর ইঞ্জিনিয়ারিং এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই মেকানিক্যাল সেক্টরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন নুর মোহাম্মদ।
১৯৮০ সালে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় একটি জায়গা কিনে এন মোহাম্মদ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ করেন। চট্টগ্রাম বন্দর, বাণিজ্যিক জাহাজ, রেলওয়ে সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করা হতো এই ওয়ার্কশপে। তখন থেকেই বাংলাদেশে ব্যবসার শুরু নুর মোহাম্মদের।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সেক্রেটারি জেনারেল নারায়ণ চন্দ্র দে বলেন, বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজার। এর মধ্যে প্লাস্টিক চেয়ারের বাজার ৫ শতাংশ। বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার ১০০ প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বৃহৎ প্লাস্টিক কারখানা আছে প্রায় ৩০ থেকে ৫০টি। প্লাস্টিক চেয়ার রপ্তানির সাথে জড়িত ২৫টি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে ছোট-বড় প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির সাথে যুক্ত প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরো বলেন, বছরে ডিরেক্ট এবং ডিমড মিলিয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকা, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিতে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানিকৃত প্লাস্টিক পণ্যের মধ্যে ২ শতাংশ রপ্তানি হয় প্লাস্টিক চেয়ার। ভারত, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক চেয়ার রপ্তানি হয়।
এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল হক বলেন, "মধ্যপ্রাচ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের অর্জিত আয়ের টাকায় আমার বাবা বাংলাদেশে প্লাস্টিক কারখানা গড়ে তুলেছেন। আমরা দ্বিতীয় প্রজন্ম এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তার দূরদশী ও সৃষ্টিশীল চিন্তার ফসল এন মোহাম্মদ গ্রুপ। আমরা পরবর্তী প্রজন্ম এন মোহাম্মদ গ্রুপের ব্যবসার পরিধি আরো বিস্তৃত করতে চাই।"
তিনি বলেন, "শুরু থেকেই এন মোহাম্মদ কোয়ান্টিটিকে গুরুত্ব দেয়নি। সব সময় চেয়েছে কোয়ালিটি ধরে রাখতে। মূলত ব্যবসায়িক এই পলিসিই এন মোহাম্মদকে এতদূর নিয়ে এসেছে। শীঘ্রই প্লাস্টিক ট্যাংক উৎপাদনে যাচ্ছি আমরা, যেখানে সর্বোচ্চ ১০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতার ট্যাংক উৎপাদন করা হবে।"
দেশের প্রতি নুর মোহাম্মদের টান
পিতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নজরুল হক বলেন, "অনেককেই দেখেছি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করতে। আমার বাবা বিদেশি রেমিটেন্সের টাকায় বাংলাদেশে গড়ে তুলেছেন প্লাস্টিক কারখানা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। মধ্যপ্রাচ্যে থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য তিনি অবদান রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন স্থানে সভা করে সেখান থেকে টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার জন্য। এজন্য সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও দিয়েছেন। রেমিটেন্স ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ সরকার তাকে সিআইপি ঘোষণা করে।"
কর্মীদের প্রতি সংবেদনশীল এন মোহাম্মদ গ্রুপ
শুরু থেকেই কর্মীদের প্রতি সংবেদনশীল এন মোহাম্মদ গ্রুপ। একাধারে ৩০ বছর এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছে বহু কর্মী। প্রতিবছর রমজানে কারখানায় শ্রমিকদের বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া অন্য সময়ে সকালে এবং সন্ধ্যায় ফ্রি নাশতা সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। ১০ টাকায় লাঞ্চের সুযোগ পায় কর্মীরা। ফ্রি অব কস্টে কর্মীদের রেসিডেন্সের ব্যবস্থা করা হয়। করোনাকালীন সময়ে কোন শ্রমিকের বেতন কাটা হয়নি; কোন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে এন মোহাম্মদ গ্রুপ। এছাড়া সিএসআর (কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা)-এর অংশ হিসেবে বোয়ালখালী উপজেলায় সড়কবাতি নির্মাণ সহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা প্রদান করে এই শিল্প গ্রুপ। করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সুরক্ষা সামগ্রীও বিতরণ করেছে এন মোহাম্মদ গ্রুপ।
যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে
গ্যাস সংকট এন মোহাম্মদ গ্রুপের উৎপাদন লক্ষমাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বাজারে প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের যে চাহিদা রয়েছে তাতে বর্তমান উৎপাদনের দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো। নতুন কারখানায় গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত হলে এন মোহাম্মদ গ্রুপের আরো নতুন পণ্য এবং উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল হক বলেন, "এই সেক্টরে দক্ষ কর্মীর সংকট তৈরী হয়েছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরী করতে সরকারকে ট্রেনিং সেন্টার, কারিগরি শিক্ষা চালু করতে হবে।"