রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিকে মরীচিকা বলছেন অর্থনীতিবিদেরা
অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অস্বস্তি দেখা গেলেও, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। তবে তার মানেই পুরো চিত্রটি সুখকর নয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি এবং বিগত পাঁচ অর্থবছরের একই সময়ের গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায়ও বেশি।
এপর্যন্ত এনবিআর আদায় ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি রাজস্ব আদায় করেছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আদায় হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি বা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে, বাকী দুই মাসের প্রতি মাসে গড়ে আদায় করতে হবে ৫১ হাজার কোটি টাকা করে, যা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এনবিআর কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, অর্থবছরের বাকী সময়ে তারা রাজস্ব আদায়ে আরও বেশি বা ১৭ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির আশা করছেন।
তবে এ ধরনের অতি-আশাব্যঞ্জক পূর্বাভাসে আস্থা রাখছেন না অর্থনীতিবিদেরা। তাদের মতে, রাজস্ব আদায়ের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা মূলত আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৪৩.৫ শতাংশ।
এনবিআরের রাজস্বের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শুল্ক আদায় বেড়ে যাওয়ার সত্যতা মেলে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে শুল্ক আদায়ে, যা মূলত আমদানি পণ্যের উপর আদায় করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রির উপর ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রাজস্বের এই প্রবৃদ্ধিকে সন্তোষজনক বলা যাবে না। কেননা, এটি আমদানি পণ্যের মূল্য অনেক বেড়ে যাওয়ায় ফলে হয়েছে। এই আদায় প্রধানত মূল্যস্ফীতি চালিত; এনবিআরের প্রশাসনিক দক্ষতা থেকে তা হয়নি।
তিনি উল্লেখ করেন যে, এই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮-৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকতে পারে।
সামনে কঠিন সময়ের আভাস দিয়ে তৌফিকুল বলেছেন, এই সময়ে ভর্তুকি ও সরকারি ব্যয়ের চাপ বাড়বে। তা মোকাবেলা করতে এনবিআরের প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়িয়ে এবং কর ফাঁকি ঠেকানোর মাধ্যমে আদায় বাড়াতে হবে।
আগামী বাজেটে পণ্যমূল্যে শুল্ক কমানো, করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো, বৃহৎ শিল্পকে দেওয়া কর অব্যাহতি কমিয়ে দেওয়া এবং কর্পোরেট কর- এ ছাড় না দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
তৌফিকুল একাই এমনটা মনে করেন না। একই উপসংহার টেনেছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।
তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক বেড়েছে, যা সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়িয়েছে। এর ফলে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে সাময়িক স্বস্তি দেখা গেলেও পণ্য মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে।
টিবিএসকে তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে বাকী মাসগুলোয় রাজস্ব আদায়ে নাটকীয় অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই, বিশেষত ভ্যাট আদায়ে।
২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহ করেছে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা।আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা হতে চলেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর গত এপ্রিলে ২৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি আদায় করেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আদায় ছিল প্রায় ২৩ হাজার ও ২৭ হাজার কোটি টাকা।