ভারত রপ্তানি সীমিত করায় চিনি সংকটের আশঙ্কা
তেল এবং গমের পর এবার চিনি নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার ভারতের কর্মকর্তারা জানান, নিজস্ব খাদ্য সরবরাহ রক্ষার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চিনি রপ্তানি সীমাবদ্ধ করতে প্রস্তুত তারা।
করোনায় উৎপাদন ব্যহত হওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে গম ও ভোজ্যতেলে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখছে বিশ্ব। এর মধ্যে ভারতের চিনি রপ্তানির লিমিটেডেশনের খবরে সংকট আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রায় শতভাগ আমদানি নির্ভর দেশীয় কারখানার র সুগারের ১৫ শতাংশ যোগান দেয় ভারত। এই চিনি বন্ধ হয়ে গেলে গম এবং ভোজ্যতেলের মতো চিনির দামও বেড়ে যেতে পারে।
আব্দুল মোনেম সুগার মিলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, "আমাদের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই ব্রাজিল থেকে আসে। তবে ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে বৈশ্বিক বাজারেই চিনির দাম বাড়বে। ভারতের মতো সহজ সোর্স বন্ধ হলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংকট তৈরি হবে।"
পাইকারি বাজারে চিনির দাম গত এক মাসে প্রতি কেজি ২ টাকা থেকে ৩ টাকা বেড়ে ৭৪ টাকায় ঠেকেছে। খুচরা বাজারে এর দাম প্রতি কেজি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। আমদানিকারকদের মতে, ভারতের চিনি রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে পারে বুধবার থেকে।
এর আগে মে মাসে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ভারত।
এছাড়া আর্জেন্টিনা ও ইন্দোনেশিয়া ভোজ্যতেলের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ভোগান্তিতে পড়েন বাংলাদেশি ভোক্তারা।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী দেশ। ব্রাজিলের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি রপ্তানিকারক তারা।
দেশবন্ধু সুগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, চিনি রপ্তানির ওপর ভারতের যেকোনো আকারের নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষতি করবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বিপণন বছরে চিনির রপ্তানি ১০ মিলিয়নে সীমাবদ্ধ করেছে ভারত।
ভারতের শীর্ষ চিনি গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং দুবাই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১.৫ মিলিয়ন টন। সরকারি মিলগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার টন চিনি উৎপাদন করা হয়। বাকি চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পরিশোধনকারীরা কাঁচা চিনি আমদানি করেন।
দেশবন্ধু চিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম রহমান বলেন, "বৈশ্বিক চিনির বাজারে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটি চিনি রপ্তানি বন্ধ করলে স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক বাজারে সংকট দেখা দিবে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এর প্রভাব বেশি পড়বে।"
সিটি, পার্টেক্স, এস আলম, আব্দুল মোনেম, দেশবন্ধুসহ ৭টি বেসরকারি কোম্পানি ব্রাজিল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে দেশে উৎপাদন করে।
গত বছর ৬ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে এসব কোম্পানি। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১ হাজার ৮ কোটি টাকার। অন্যদিকে শুধু ব্রাজিল থেকেই এসেছে ৫ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার চিনি।
চলতি বছরের মার্চে রয়টার্স জানায়, স্থানীয় দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চিনি রপ্তানি কমানোর পরিকল্পনা করছে ভারত।
অন্যদিকে, ব্রাজিলে চিনির উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় দেশটিতে আখ-ভিত্তিক ইথানল উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যের ওপর।
প্রাথমিকভাবে ভারত ৮ মিলিয়ন টনে চিনি রপ্তানি সীমাবদ্ধ করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু, পরবর্তীতে দেশটির সরকার আরও ২ মিলিয়ন টন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
ভারতের চিনি উৎপাদনকারী ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তাদের এবারের উৎপাদন হতে পারে ৩৫.৫ মিলিয়ন টন; যা তাদের আগের অনুমান (৩১ মিলিয়ন টন) থেকে বেশি।
ভারতীয় চিনিকলগুলো সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই চলতি ২০২১-২২ সালে ৮.৫ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিবদ্ধ ৮.৫ মিলিয়ন টন এর মধ্যে ইতোমধ্যেই প্রায় ৭.১ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানি করা হয়েছে।