পাচারের অর্থ দেশে ফেরত আনতে রেমিটেন্সের নিয়ম শিথিল: অর্থমন্ত্রী
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতেই ৫০০০ ডলার পর্যন্ত রেমিটেন্স বিনা ডকুমেন্টে দেশে পাঠানোর সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া, নির্ধারিত হারে কর দিয়ে বিদেশে থাকা সম্পদও বৈধ করার সুযোগ থাকছে বাজেটে। অর্থ পাচারকারী ও বিদেশে অবৈধ সম্পদের মালিকদের কোন প্রশ্ন করা হবে না।
দেশে বিদ্যমান ডলার সংকট মেটানো এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপ হিসেবে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৫০০০ ডলার বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা ডকুমেন্টে দেশে আনার যে সার্কুলার বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করেছে, তা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য করা হয়েছে।
'যারা পাচার করা টাকা দেশে রেমিটেন্স আকারে পাঠাবেন, তাদের কোন প্রশ্ন করা হবে না। যেসব টাকা বিভিন্ন সময় দেশ থেকে বিদেশে চলে গেছে, এতে সেসব টাকা ফেরত আসবে বলে আশা করছি', জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, 'বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময় এ ধরণের ট্যাক্স অ্যামনেস্টি দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া এ ধরণের সুযোগ দিয়েছিল। সেখানে অনেক টাকা ফেরত এসেছে। যারা টাকা পাচার করেছে কিংবা বিদেশে অবৈধ সম্পদ করেছে, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ। তারা এটা কাজে লাগাতে আগ্রহী হবে।'
'আমরা চাচ্ছি যেসব টাকা বিভিন্ন সময় দেশ থেকে পাচার হয়েছে, সেগুলো দেশে ফেরত আসুক। দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালত থেকে বিভিন্ন সময় আমরা অর্থ পাচারের বিভিন্ন তথ্য এবং তা ফেরত আনার নির্দেশনা পাই। সেসব নির্দেশনার আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে বিদেশে থাকা সম্পদ ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ বাজেটে রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে বাজেট সংসদে উপস্থাপনের আগে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।'
দেশ থেকে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে, সে তথ্য জানাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
ডলার সংকট মোকাবেলায় অর্থ পাচারকারীদের এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, 'অফকোর্স দেশে ডলার সংকট রয়েছে, আমাদের ডলার দরকার। কিন্তু যেরকম সংকট বলা হচ্ছে, ওই রকম নয়। আমাদের রিজার্ভ গুড ফর এনাফ। আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় আমাদের রিজার্ভ ভালো।'
'২০০১ সালে এ ধরণের ক্রাইসিস হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাস পণ্য আমদানিতে সিকিউরিটি মানি বা এলসি মার্জিন বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন শুল্ক-কর বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, 'দাম বাড়লে কারও না কারও উপর এর প্রভাব পড়ে। তবে এই ইমপ্যাক্ট যাতে কম পড়ে, সেজন্যই আমরা কনজ্যুমারদের সঙ্গে শেয়ার করে নিচ্ছি।'
সারাবিশ্বেই 'আপস এন্ড ডাউন' পরিস্থিতি চলমান জানিয়ে কামাল বলেন, আগামী বাজেটের মাধ্যমে আমাদের মূল কাজ হবে বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা। এ দু'টি নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, যুক্তরাজ্যেও ৩৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ সবারই একই অবস্থা।
'আমরা চেষ্টা করছি, দেশের মানুষ যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্যই ঈদে এক কোটি পরিবারকে ডাল, তেল, চিনি কম মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।