অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ঢাকা-দিল্লি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে একটি বড় চুক্তি
ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (এসইপি) বা সেপা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে সরকার। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা হারালেও সেপা চুক্তির মাধ্যমে আকর্ষণীয় এক সম্ভাবনার দ্বার খুলছে বাংলাদেশের সামনে।
ঢাকা ও দিল্লির যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে আগামী সাত থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩-৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়বে। একই সময়ে ভারতের আয় বাড়বে ৪-১০ বিলিয়ন ডলার।
প্রস্তাবিত সেপা স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশের জন্য বিনিয়োগের নতুন দরজা উন্মুক্ত হবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) থেকে সেপা অনেকটাই ভিন্ন কেননা এর মধ্যে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মেধাস্বত্ব ও ই-কমার্সের মতো অনেকগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুই দেশের যৌথ সম্ভাবনা অধ্যয়ন সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউট (বিএফটিআই)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাবেক বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খসড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা ও বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হবে।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এ ধরনের চুক্তি করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে সতর্কভাবে এ চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্পন্ন করা হবে। ফলে কতদিনের মধ্যে এটি সই হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে চুক্তি
বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) ও ভারতের সেন্টার ফর রিজিওনাল ট্রেড (সিআরটি)-এর যৌথ সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'প্রক্ষেপণ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত সেপা শুধু সম্ভাবনাময়ই নয় বরং দ্বিপাক্ষিক পণ্যবাণিজ্য, সেবা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি পারস্পরিকভাবেও লাভজনক।'
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ৮.৫৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের পরই সর্বোচ্চ। একই সময়ে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ১.২৭৯ বিলিয়ন ডলার।
সেপা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ মেরিন পণ্য, কাপড় ও পোশাক, ওষুধ, প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ চর্বি বা বিভিন্ন ওয়াক্স (মোম), ইনঅর্গানিক কেমিক্যালস, আটা থেকে প্রস্তুতকৃত পণ্য ইত্যাদির রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা)-র আওতায় বাংলাদেশ ভারতে অস্ত্র ও মাদকসহ ২৫টি পণ্য বাদে সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেলেও নন-ট্যারিফ বাধার কারণে দেশটিতে রপ্তানি বাড়ছে না।
গত অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি
গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে, রপ্তানি হয়েছে ১৭০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে খাদ্য ও খাদ্যপণ্য, আর্থ মেটারিয়াল, মিনারেল ফুয়েল, রাসায়নিক, ওষুধ, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত পণ্য, কাঠের তৈরি পণ্য, তুলা, বুনিত বস্ত্র, লোহা ও ইস্পাত, রেলওয়ে ট্রাম ও লোকোমোটিভসহ অন্যান্য যানবাহন রপ্তানির সুযোগ বাড়বে প্রতিবেশী দেশটির।
সেপা চুক্তি হলে দুই দেশের মধ্যে সেবা বাণিজ্যও বাড়বে বলে উঠে এসেছে সমীক্ষা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সেপা চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যকার পণ্য বাণিজ্য বাড়বে, তা থেকে দ্বিপাক্ষিক সেবা বাণিজ্যও উপকৃত হবে। কারণ তখন পরিবহন, বিমা, ব্যাংকিং সেবা, টেলিযোগাযোগ ও বিতরণসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সহায়ক সেবার প্রয়োজন তৈরি হবে।
যেসব খাতে বাংলাদেশ ভারতে সেবা রপ্তানি করতে পারবে সেগুলো হলো- পেশাদারি সেবা, আইটি/ টিইএস সার্ভিস, অবকাঠামো ও তদসংশ্লিষ্ট সেবা, আর্থিক এবং যোগাযোগ সেবা। ভারত যেসব খাতে বাংলাদেশে সেবা রপ্তানি করতে পারবে, সেগুলো হলো- অন্যান্য ব্যবসায়িক সেবা, পর্যটন, ব্যক্তিগত ভ্রমণ ও পণ্যবহন সেবা, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার ও তথ্য সেবা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা।
গবেষণার খসড়া প্রতিবেদনটি আরও বলেছে, দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বাণিজ্য বৃদ্ধির যেকোনো চেষ্টা সফল করতে হলে উভয় দেশের মধ্যে আন্তঃদেশ ও আন্তঃখাত বিনিয়োগের দরকার হবে।
প্রতিবেদনে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাতগুলো তুলে ধরা হয়, এগুলো হলো- খাদ্য, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাপড় ও পোশাক খাত, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি যন্ত্রপাতি কারখানা, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক্স, সিরামিক, আইসিটি খাত, ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা, টেলিযোগাযোগ ও বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প।
ভারতের যেসব খাতে বিনিয়োগকে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো- খাদ্য ও পানীয়, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাপড় ও পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, সিমেন্ট, স্পিনিং মিল, ইলেকট্রোনিক্স ও ব্যাটারি, ভ্রমণ ও পর্যটন এবং আইসিটি।
বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভারতীয়রা বিনিয়োগ করতে পারলেও, বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করতে চাইলে আগে ভারত সরকারের অনুমতি নিতে হয়।
ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সমানুপাতিক করার পক্ষে মত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপার অধীনে বৈধ বিনিয়োগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে দুই পক্ষই কাজ করবে, যাতে করে উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রবাহ স্বতঃস্ফুর্তভাবে হওয়ার পাশাপাশি দ্রুততার সাথে এবং সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থায় সম্পন্ন করা যায়।
আঞ্চলিক মূল্য সংযোজন তৈরির সুযোগ
সম্ভাব্যতা অধ্যয়নে আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেই একটি আঞ্চলিক মূল্য শৃঙ্খল (রিজিওনাল ভ্যালু চেইন বা আরভিসি) তৈরির সুযোগ রয়েছে।
"প্রস্তাবিত সেপা দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের মাধ্যমে আরসিভি তৈরিতে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ ও ভারত নতুন আরসিভি তৈরি করতে পারে বা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, রাসায়নিক, ওষুধ, টেক্সটাইল, চামড়া ও ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির মতো খাতে বিদ্যমান আরসিভিকে শক্তিশালী করতে পারবে দ্বিপাক্ষিক পণ্য ও সেবা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে। এসংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলি নিরসনে আরভিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সেজন্য কার্যকর আবহ তৈরি করবে সেপা।"
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাবেক সভাপতি মাতলুব আহমাদ টিবিএসকে বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন ভ্যালু চেইন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
"ভারতের তুলা আছে। আমরা সুতা ও আরএমজি তৈরি করতে পারি। তাই সেপা স্বাক্ষর হলে দুই দেশেই যৌথ বিনিয়োগ বাড়বে। এতে পারস্পারিক আমদানি-রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে।"
তিনি বলেন, দুই দেশের যে দক্ষতা ও সম্পদ রয়েছে, সেপা স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা পরস্পরের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এতে দুই দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও সুযোগ হবে।
'পারস্পরিক আমদানি-রপ্তানি বাড়ার যে সম্ভাবনার কথা সেপার যৌথ সমীক্ষার চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আমি তার সাথে একমত পোষণ করছি। সেপার আওতায় দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান বাধাগুলো দূর হলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে'- আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের প্রতিবেদন আরও জানিয়েছে, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি। তাই সেপার মাধ্যমে একটি নতুন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে এ দুই অর্থনীতিকে সংযুক্ত করা ও বাণিজ্যিক যোগসূত্রগুলি সম্প্রসার করা প্রয়োজন- যার মধ্যে আরভিসি কার্যকরের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থাকবে।
এসব পরিমণ্ডলে দুই অর্থনীতিকে একত্রিত করলে শুধু বাণিজ্যই বাড়াবে না, বরং একইসাথে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তুলবে; যা উভয়ের সার্বিক অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
সেপার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভ্যাব্য নীতি প্রতিক্রিয়া
সিইপিএ চুক্তি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা পাবে, কিন্তু এর বেশ কিছু সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও আছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে কিছু হলো দুটি দেশের প্রাপ্ত সুবিধার ভারসাম্য, হার্ড ও সফট অবকাঠামোর মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে বিরামহীন সংযোগ, সংবেদনশীল খাতের জন্য সমানুপাতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ দুটির মধ্যকার বাণিজ্য নীতি নিয়ে বোঝাপড়া না থাকলে এর অনিশ্চিত ও অসুবিধাজনক বাস্তবায়ন হবে, যার প্রভাব পড়বে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও সাধারণ ভোক্তাদের ওপর, বিশেষ করে সীমান্ত চেক-পয়েন্টগুলোতে। এ কারণে সেপা'র মাধ্যমে সামগ্রিক উপায়ে কাস্টমস সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
চুক্তির সাফল্য পেতে হলে নন-ট্যারিফ শুল্ক বাধার সমস্যার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে পারে সেপা।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে খাদ্য নিরাপত্তার মান না মেলার পেছনে অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো টেস্টিং সুবিধার অভাব। সেপা'র বিনিয়োগ চ্যাপ্টার নিয়ে আলোচনায় এটি মাথায় রাখতে হবে।
"বাণিজ্যে যে কোনো ধরনের বাধা এড়াতে ভারতের নতুন কাস্টম নিয়মের (সিএআরওটিএআর, ২০২০) সাথে সাফটা চুক্তি খতিয়ে দেখতে হবে। সেপা'র আলোচনায় এ বিষয়ে জোর দিতে হবে।"
ক্রাউড আউটের শিকার হতে পারে স্থানীয় কর্মসংস্থান
গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপাতে বাণিজ্য সেবা অন্তর্ভুক্ত হলে উভয় দেশে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের ক্রাউডিং আউট (প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার) প্রভাব সৃষ্টি সংক্রান্ত উদ্বেগ আছে। একারণে, উভয়পক্ষের সুবিধার জন্য বাণিজ্যের সম্ভাব্য খাতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি, কীভাবে সাময়িক জন-চলাচল বিকাশের অমিত সম্ভাবনাকে বিসর্জন না দিয়েই এ সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর করা যায়- সেপা আলোচনায় সেখানেও মনোযোগ দিতে হবে।
সেবার বাণিজ্যে অন্যতম বড় সীমাবদ্ধতা হলো সীমাবদ্ধ ভিসা ব্যবস্থা। এর ফলে ব্যবসায় টু ব্যবসায় যোগাযোগ, বাণিজ্য সংক্রান্ত ভেঞ্চার ও এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
গবেষণাটিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, মুদ্রা বাজারের আকস্মিক অস্থিরতার প্রভাব কমাতে পর্যাপ্ত নীতিমালা প্রয়োজন, যাতে দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ স্থিতিশীল থাকে।
প্রতিবেশী হিসেবে দুটি দেশই তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করছে, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলেছে।
বাণিজ্য ও সংযোগ, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা, পানি সম্পদ ও বিদ্যুতে সহযোগিতা, বিনিয়োগ প্রচার ও সুরক্ষা, দ্বৈত কর পরিহার, সীমান্ত হাট খোলা, নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আছে।
বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার:
বাংলাদেশের সাথে ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতার আকার ও পরিধি উভয় দিক থেকেই বেড়েছে। ৮ বিলিয়ন ডলারের তিনটি লাইন অব ক্রেডিট বাস্তবায়ন হচ্ছে, ভারতের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর ভিত্তিতে সেপা স্বাক্ষরের কথা বলে ভারত।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আরেকটি বৈঠকে উভয় পক্ষ এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মত হয়। পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক অংশিদারিত্বের জন্য ভালো ভিত্তি হবে বলে একমত হন তারা। এ চুক্তির সম্ভাবনার বিষয়ে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের যৌথ গবেষণার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ চুক্তি উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হবে কি-না তা খতিয়ে দেখতে যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই গবেষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।