আরএমজি বহির্ভূত খাতের জন্য করপোরেট কর কমিয়ে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে বাজেটে
বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) যে হার উপভোগ করছে- সকল রপ্তানি খাতের জন্য সেই একই ১২ শতাংশ হারে বাণিজ্যিক বা করপোরেট কর নির্ধারণ করতে চলেছে সরকার। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে উৎসাহিত করতে এটি করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র।
এছাড়া সবুজ বা পরিবেশবান্ধব শিল্পের পণ্য ও সেবার করহার ১০ শতাংশ করা হবে। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাত বর্তমানে পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির জন্য ৩০ শতাংশ কর দেয়।
করপোরেট কর ব্যাপক হ্রাস অন্যান্য সকল খাতের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমানুপাতিক সুবিধা সৃষ্টি করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, এই ধরনের রপ্তানি-বান্ধব উদ্যোগ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্টের) ঘাটতিও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
রপ্তানিমুখী আরএমজি কারখানার জন্য প্রস্তাবিত করহার দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ এবং সবুজ কারখানার জন্য সেটি ১০ শতাংশ হবে।
পরিবহন পরিষেবা, মোবাইল টেলিযোগাযোগ পরিষেবা এবং ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট-ভিত্তিক পরিষেবার জন্য হ্রাসকৃত হার প্রযোজ্য হবে না বলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)- এর সভাপতি শামিম আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হবে।"
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মতি বলেন, তৈরি পোশাক খাত কাস্টমস সংক্রান্ত পরিষেবাতেও বাড়তি সুবিধা পায়। সমানুপাতিক বা লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা হলে নন-আরএমজি খাতগুলোর রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে তা আরো সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্যান্য শিল্পকে সহায়তা দিয়ে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস খাতের সাথে সমতা রক্ষা করায় এ সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হলেও কমানো যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় একটি বন্ডেড ওয়্যারহাউজের আওতায় সরকারকে সকল রপ্তানিকারককে কাঁচামাল সংগ্রহে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর ট্রাস্টি আবুল কাশেম খান মন্তব্য করেন, রপ্তানি ঝুড়ি বৈচিত্র্যকরণে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।
"সকল রপ্তানি খাতকে সমানভাবে বিকাশের সুযোগ দেওয়ার এ দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের।"
সব রপ্তানিকারককে অভিন্ন (কমন) বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত বলেও মনে করছেন ডিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান।
ইন্টারন্টে সার্ভিসের উপর ১০% উৎস কর আরোপের প্রস্তাব
ইন্টারন্টে সার্ভিসের উপর ১০% উৎস করের প্রস্তাব আসছে। বাংলাদেশে অবস্থান নেই এমন বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ব্যান্ডউইথের অর্থ পরিশোধকালে বিদ্যমান উৎস কর ২০ শতাংশ থেকে অর্ধেক কমিয়ে ১০% করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো।
আগামী বাজেটে বেভারেজ বা পানীয়র কাঁচামাল, পরিষেবা রপ্তানি, অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারী জাহাজ ও বাণিজ্যিক যানবাহন আমদানিকালে সমন্বয়ের পর ৫ শতাংশ কর ন্যূনতম কর হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব আসছে।
বর্তমানে সন্তান বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোনো উপহার হিসেবে টাকা, জমি বা সম্পত্তি পেলে তা করমুক্ত। কিন্তু বাবা-মা সন্তানের কাছ থেকে পেলে তা করযোগ্য রয়েছে। আগামী বছর এই কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব আসছে।
শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে না:
শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলেও তাতে চলতি অর্থবছরে তাতে প্রত্যাশিত সাড়া আসেনি। তাই আগামী অর্থবছর এ সুবিধা বাতিল হতে পারে।
চলতি অর্থবছরে ২৫% কর ও ওই করের উপর ১০% জরিমানা দিয়ে এই খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। একইভাবে অপ্রদর্শিত ব্যাংক আমানত, জমি, অ্যাপার্টমেন্ট ও নগদ টাকা আলোচ্য হারে কর ও জরিমানা দিয়ে সাদা করার সুযোগও বাতিল হতে যাচ্ছে এবার।
নতুন পরিষেবায় উৎস কর
নতুন বাজেটে সরকারি সম্পত্তি নয় এমন জলাশয়ের ভাড়ামূল্যের উপর ৫ শতাংশ উৎস করারোপের প্রস্তাব আসছে।
একইসময়, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের তাদের গ্রাহকদের থেকে বিল গ্রহণের সময় ১০ শতাংশ উৎস কর দিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সহজ করার জন্য উৎস কর সংশোধন করা হবে। কারণ একটি পরিষেবার জন্য বর্তমান হারগুলি ২৫ লাখ টাকার বেশি নয় এমন পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ভাগ করা হয় - পরিমাণ বেশি হলে তবে হারও বেশি হয়।
নতুন বাজেট প্রস্তাবনা অনুসারে, উপদেষ্টা বা পরামর্শ পরিষেবা, পেশাদার পরিষেবা, ক্রেডিট রেটিং পরিষেবা, প্রযুক্তিগত পরিষেবা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ফির উপর উৎস কর বিদ্যমান ১২ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ হারে কাটা হবে।
একই সাথে ক্যাটারিং, ক্লিনিং, কালেকশন অ্যান্ড রিকভারি, বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা, জনশক্তি সরবরাহ, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া, জনসংযোগ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, কুরিয়ার সার্ভিস প্যাকিং এবং শিফটিং পরিষেবার ওপর একই হারে কর নির্ধারণ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, এসব প্রস্তাব যদি অনুমোদন পায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়বে। নেট কর ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিও প্রসারিত হবে। নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা বাড়াতে পারবেন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশও নিশ্চিত হবে।