পাচার সম্পদ বৈধকরণে ৭-১৫ শতাংশ পর্যন্ত করের প্রস্তাব
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে। এ বাস্তবতায় আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এসময় তিনি বিদেশে অবস্থিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে কর দিয়ে বৈধকরণের প্রস্তাব দেন।
দেশের বাইরে অপ্রদর্শিত সম্পদ পাচার করা বাংলাদেশি নাগরিকরা কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মাত্র ৭-১৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দেওয়ার শর্তে বৈধতার এ সুযোগ রাখা হয়েছে।
ইতঃপূর্বে একে সরকারের 'অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টি' উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার সহায়ক হবে এই ক্ষমা প্রদর্শন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার লক্ষ্যে সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য এক দিকে আমাদের আরও বেশি পরিমাণে রাজস্ব যোগান দিতে হবে, অন্য দিকে বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতিশীলতা আনতে হবে। 'এ অবস্থায় বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি। প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থিত যেকোনো সম্পদের উপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।'
বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনীত না হলে এর উপর ১৫ শতাংশ, বিদেশস্থ অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনীত না হলে এর উপর ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে রেমিটকৃত নগদ অর্থের উপর ৭ শতাংশ হারে কর ধার্য্যের প্রস্তাব করেন মুস্তফা কামাল।
এ বিষয়ে অবহিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এর আগে জানান, অপ্রদর্শিত সম্পদের অধিকারীরা এর আওতায় ট্যাক্স রিটার্নে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে দেশের বাইরে থাকা তাদের স্থাবর সম্পত্তি প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। নগদ অর্থ, ব্যাংক হিসাব, সিকিউরিটিজ এবং অন্যান্য আর্থিক উপকরণ (ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট)-সহ অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে ফিরিয়ে না এনেই বৈধ করার ক্ষেত্রে তাদের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে তাদের।
এছাড়া, যেকোনো প্রকার নগদ অর্থ, ব্যাংক ডিপোজিট, ব্যাংক নোট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, রূপান্তরযোগ্য সিকিউরিটিজ এবং আর্থিক উপকরণ যদি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করা হয়, তাহলে ৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় জানান, 'এ সুবিধা ২০২২ সালের ১লা জুলাই হতে ২০২৩ সালের ৩০শে জুন পযর্ন্ত বলবৎ থাকবে। প্রস্তাবিত বিধান কার্যকর হলে অর্থনীতির মূল স্রোতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, আয়কর রাজস্ব আহরণ বাড়বে এবং করদাতাগণও বিদেশে অর্জিত তাদের অর্থ-সম্পদ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ পেয়ে স্বস্তিবোধ করবেন।'