পাচার অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দিয়ে প্রবাসীদের অপমান করা হয়েছে: রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
৭% কর দিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দিয়ে প্রবাসীদের অপমান করা হয়েছে। এতে সামাজিকভাবেও প্রবাসীরা হেয় হবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যেতে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করে সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ।
তিনি বলেন, 'প্রবাসীরা করমুক্ত ছিল। পাচারকারীদের জন্য পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের সুযোগের কারণে প্রবাসীরাও আইনি ফাঁদে পড়তে পারে।'
সোমবার (১৩ জুন) ঢাকার সেগুনবাগিচার সাগর-রুনি মিলনায়তনে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত এক বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ আইবিএফবি'র অর্থায়ন কমিটিরও চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যারা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনবেন- তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না। তার মানে কে শ্রমিক, কে পাচারকারী তা চিহ্নিত করা হবে না। আমরা বলি প্রশ্ন করলে অসুবিধা কী!
তিনি আরও বলেন, 'যে দেশ থেকে অর্থপাচার করেছে- তাকে কেন তাকে সুরক্ষা দিতে হবে। অর্থপাচার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকার চুক্তি করেছে। মানি-লন্ডারিংয়ের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের 'এগমন্ট' চুক্তি রয়েছে, সেই অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? সরকার বলছে, এখন মানি-লন্ডারদের কিছুই বলা হবে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাছাড়া এ ধরণের সুযোগ আগে দেওয়া হলেও অর্থ ফেরত আসার তেমন রেকর্ড নেই।'
সংবাদ সম্মেলনে আইবিএফবির পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে এর প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন রশিদ।
তিনি বলেন, বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ও সুশাসনের কথা বলা হলেও পাচার হওয়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। কালো টাকা সাদা করার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন। তারপর কালোটাকা উদ্ধারে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার আবশ্যকতা থাকবে। কেননা যখন ফাঁকি দিয়ে ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে তখন সাদা করার তাগিদ থাকে না। আর পাচার করা টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে না- এ ধরণের 'অ্যামনেস্টি' দেওয়া হলে অর্থনীতিতে নীতিনৈতিকতার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর ফলে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিভিন্ন দেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে বিরুপ প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন হুমায়ূন রশিদ।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল মজিদ বলেন, বরাদ্দ বিবেচনায় বাজেটে অনেক খাতকে বড় করে দেখানো হয়। যেমন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এমন অনেক অঙ্গ রয়েছে, যা এ খাতের সঙ্গে যায় না। এর মাধ্যমে সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেস্টা করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের বাজেট প্রণোয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা সাবেক এই আমলা বলেন, তার সময়ে বলা হয়েছিল, শিক্ষা বাজেটকে বড় করে দেখাতে হবে। কিন্তু যে বরাদ্দ এ খাতে- তাতে শিক্ষা বাজেট বড় হয় না। তখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগে কম্পিউটার কেনার টাকায় যে বরাদ্দ দেওয়া হতো- তাও শিক্ষা খাতে যোগ করা হয়। এটা করা হতো শুধু মাত্র শিক্ষা বাজেট বড় করে দেখানোর উদ্দেশ্যে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইবিএফবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এস সিদ্দিকী, সংস্থার পরিচালক ও সাবেক সচিব ড. মতিউর রহমানসহ অন্যান্যরা।