অপারেশন পাইনঅ্যাপল এক্সপ্রেস: ৫ শতাধিক আফগানকে উদ্ধারে ‘জেসন বোর্নের’ মতো দুঃসাহসী অভিযান
ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে বুধবার রাতে গোপন অভিযানে নামে আমেরিকান স্পেশাল অপারেশনের অবসরপ্রাপ্ত ও সাবেক সেনা সদস্যদের একটি ফোর্স। "পাইনঅ্যাপন এক্সপ্রেস" নামের এই অপারেশন দুর্ধর্ষ থ্রিলারকেও হার মানাবে বলে জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
আফগানিস্তানের মার্কিন সেনাবাহিনী ও দূতাবাসের সঙ্গে মিলিত পরিকল্পনায় প্রায় ৫০০ আফগানকে রাতের আঁধারে মার্কিন সেনা নিয়ন্ত্রিত হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসে ইনফরমাল স্পেশাল ফোর্সের এই ইউনিট।
ফোর্সের সদস্যরা সবাই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বিশেষ অপারেটর, সহায়তাকারীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন সেনা বাহিনীর কাছে নিরাপদে তাদের পৌঁছে দেওয়ার খবর নিশ্চিত করে এবিসি নিউজ।
তালেবান টার্গেটের শিকার একজন সাবেক আফগান কমান্ডোকে বিমানবন্দরে নিয়ে আসতে গত ১৫ আগস্ট "টাস্ক ফোর্স পাইনঅ্যাপল" নামে অনানুষ্ঠানিক এই ফোর্স গঠিত হয়। ফোর্স পাইন-অ্যাপলের অংশ হিসেবেই বুধবার রাতের অভিযানটি পরিচালিত হয়।
অবসরপ্রাপ্ত গ্রিন বেরেট কমান্ডার আর্মি লেফট্যানেন্ট কর্নেল স্কট ম্যান এই উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বুধবার রাতের এই অপারেশনকে 'জেসন বোর্ন' থ্রিলারের সঙ্গে তুলনা করেন।
এবিসি নিউজ জানায়, এনক্রিপটেড একটি চ্যাট রুমে ৫০ জনের বেশি সদস্য মিলিতভাবে গোপন চলাচলসহ পুরো অপারেশনের সমন্বয় সাধন করেন।
দূর থেকেই সাবেক মার্কিন স্পেশাল অপারেশন ফোর্স এবং সিআইএ কমান্ডারদের দিক-নির্দেশনায় আফগানদের এই উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়।
নির্দিষ্ট স্থানে কমান্ডারদের নির্দেশনা অনুযায়ী সবুজ কেমিক্যাল লাইট ধারণকারী এজেন্টরা অবস্থান নেয়। জিপিএস পিন ড্রপের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নির্ণয় করে আফগানরা তাদের সঙ্গে মিলিত হন।
স্মার্টফোনে হলুদ পাইন অ্যাপল গ্রাফিক দিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।
সাবেক গ্রিন বেরেট ক্যাপ্টেন জ্যাক লুইস এবিসি নিউজকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হ্যারিয়েট টাবম্যান'স আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডে অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়। এটা সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের দাস ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করতে গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিমানবন্দরের বাইরে বিস্ফোরণে ১৩ মার্কিন সেনাসহ অন্তত ১৬৯ জন আফগান নাগরিকদের মৃত্যু হয়। সে রাতেও আরেকটি উদ্ধার অভিযানে এই টাস্ক ফোর্স কাজ করে যাচ্ছিল।
দলের উদ্ধারকৃত কয়েকজন আফগান নাগরিক এসময় আহত হয় বলেও জানায় এবিসি। যেসকল আফগানদের ফোর্স সাহায্য করছিল তাদের কেউ নিহত হয়েছেন কি না তা যাচাই করছে টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা।
"আইসিসের বোমা হামলার মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে বেশ কয়েকজন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, শিশুসহ পরিবার, অনাথ শিশু ও গর্ভবতী নারীদের কাবুলের রাস্তা দিয়ে গোপনে নিয়ে আসা হয়," বলেন স্কট ম্যান।
যুদ্ধে আহত মার্কিন নৌবাহিনী সিলে'র সাবেক সদস্য ও লেখক জেসন রেডম্যানও আফগানদের উদ্ধারের দিক-নির্দেশনায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এবিসি নিউজকে বলেন, "বৃহস্পতিবার রাতটা রোলার-কোস্টারের মতো কেটেছে। পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খল।"
হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "আমাদের সরকার এটা করেনি। আমেরিকান হিসেবে আমাদের যা করার দায়িত্ব ছিল, আমরা তা করেছি।"
- সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার