অবসরে ট্রাফিক পুলিশ সড়কে সন্তান হারানো বিচারক
বিচারকের কাজ আদালতে বাদী-বিবাদী পক্ষের উকিলের যুক্তি শোনা। প্রকৃত তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে দোষীকে শাস্তি দেয়া। অবসর সময়ে অধিকাংশ বিচারক পরিবারকে সময় দেন নয়তো আইনের জটিল কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন।
নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের এক বিচারকের অবসর নিয়ে অবশ্য এমন কোনো দাবি করা সম্ভব নয়। মনিকা ডংবান মেনসেম নামের এই বিচারকের অবসর কাটে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে।
আট বছর আগে রাজধানী লাগোসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় মনিকার ছেলে কোয়াপডা মেনসেম। লাগোসের কুখ্যাত যান-চলাচল অব্যবস্থাপনার কারণে আকস্মিক একটি গাড়ি এসে চাপা দেয় তাকে। আর এরপর থেকেই বিশৃঙ্খল নগরীর রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্রত নিয়ে অবসরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন মনিকা।
দায়িত্ব পালনকালেই একদিন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিবিসি নাইজেরিয়ার এক প্রতিনিধি। সূর্য তখন মধ্য আকাশে, তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস (১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট), জ্বলন্ত উনুনে আরও রসদ জোগাচ্ছিল রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা সারি সারি কারের সচল ইঞ্জিন। এই গরমের মাঝেই ট্রাফিক পুলিশের নীল জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে সড়কে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছিলেন মনিকা ডংবান।
মানুষ অভ্যাসের দাস নিশ্চয়, আর নাইজেরিয়ার চালকরা ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে বা অপেক্ষা করতে মোটেই অভ্যস্ত নন। তাইতো দাড়িয়ে থাকা সব কার চালকেরাই হর্ন বাজিয়ে আর চিৎকার করে মনিকাকে রাস্তা সচল করার সংকেত দিতে বলছিলেন।
এই ব্যাপারে মনিকা বলেন, অধিকাংশ নাইজেরিয়ান খুব বেশি অধৈর্য, এটা তাদের গাড়ি চালানো দেখলেই বোঝা যায়।
মনিকা বলেন, আমি অনেক বাজে ড্রাইভিং দেখেছি, এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তাতে শুধু প্রাণহানির সংখ্যাই বাড়বে।
নাইজেরিয়া সরকারের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু ২০১২ সালেই দেশটিতে ১৪ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়। আর এই সমস্ত দুর্ঘটনায় মারা গেছেন চার হাজারেরও বেশি মানুষ। আর ২০১৮ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে ১০ হাজারে নেমে এলেও প্রাণহানির সংখ্যা কমেনি। ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানুষ নিহন হন।
মনিকার পুত্রের প্রকৃত হত্যাকারী কে, তিনি জানেন না। কিন্তু এটা নিশ্চিত কোনো অসতর্ক চালকই এর জন্য দায়ী। অনেক চালকই সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সড়ক আইন না জেনেই ড্রাইভিং করছেন।
তাই ট্রাফিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশপাশি মৃত ছেলের নামে ‘কোয়াপডা’স রোড সেফটি ডিম্যান্ড’ নামের অলাভজনক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন মনিকা। তার সংগঠন চালকদের প্রশিক্ষণ এবং সড়ক সুরক্ষার নানা দিক সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। অচিরেই লাগোসের ট্যাক্সি বা বাণিজ্যিক গাড়ি চালকদের জন্য আলাদা একটি ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করার কথাও ভাবছেন তিনি।