অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে জ্বালানি কর কমাল ভারত
ভোক্তাদের ইতিবাচক খরুচে মনোভাব চাঙ্গা রাখতে গতকাল বুধবার (৩ নভেম্বর) পেট্রোল ও ডিজেলের মতো জ্বালানির ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কড়া লকডাউনের অভিঘাত থেকে এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির পুনরুদ্ধার চলাকালে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
কেন্দ্রীয় সরকার এক বিবৃতিতে প্রতি লিটার পেট্রোলে ৫ রুপি এবং ডিজেলে ১০ রুপি আবগারি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের দীপাবলি উৎসব সামনে রেখে রেয়াতের ঘোষণা দেওয়া হয়। মূলত, দীপাবলী থেকেই ভারতে উৎসবকালীন মৌসুমের শুরু হয়। এসময় ভোক্তাদের খরচ প্রবণতাও অনেক বাড়ে। ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্যও তাই এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়।
ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, সরকার এ সিদ্ধান্তের ফলে ৫৫ হাজার কোটি রুপি (৭৩৮ কোটি মার্কিন ডলার) রাজস্ব এবং কর কর্তনে ৬০ হাজার কোটি রুপি আয় হারাবে।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসায় সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর গত কয়েক মাস ধরে ভারতে ভোক্তা খরচ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। তবে জ্বালানির উচ্চমূল্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে থেকে শুরু করে কৃষকদের আয় মার্জিনও কমাচ্ছে। অথচ, অর্থনীতিতে তারা বড় অবদান রাখে। তাই তেলের কর কমানোর সিদ্ধান্ত ভোক্তাপণ্য প্রস্তুতকারক ও কৃষকদের জন্য খরচ কমাতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্যাঙ্গালুরু ভিত্তিক বিআর আম্বেদকার স্কুল অব ইকোনমিক্সের উপাচার্য ও অর্থনীতিবিদ এনআর ভানুমূর্তি বলেন, 'ভোক্তাদের মনে আরও মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা বাড়ায়, কর সংশোধনের দিকটি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি ছিল। এটি মূল্যস্ফীতির ভীতি কিছুটা হলেও কমাবে, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি টেকসইভাবে ধরে রাখার সহযোগী হবে।'
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ জ্বালানি তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা। দেশটির চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ তেলই জাহাজে করে আমদানি করা হয়।
তবে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের আগুন ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের খুচরা মূল্যেও উত্তাপ ছড়ায়, চলতি মাসে এসবের মূল্যে নতুন রেকর্ডও হয়েছে প্রতিবেশী দেশটিতে।
গেল ২৬ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের মূল্য বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৬ দশমিক ৪০ ডলারে উন্নীত হয়, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ দর। বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কমে এখন প্রতিব্যারেল ৮২ দশমিক ৫ ডলারে বিকিকিনি হলেও মহামারির অভিঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি এতে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে।
ভারতে তেলের মূল্য নির্ধারণের একটি বড় অংশ হচ্ছে এর ওপর আরোপিত কর। রাজধানী নয়াদিল্লিতে এক লিটার পেট্রোল কিনতে হয় ১১০ দশমিক ৪ রুপিতে, আর ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ৯৮ দশমিক ৪২ রুপি।
বুধবার মূল্য কর্তন ঘোষণার আগে পেট্রোলের লিটারপ্রতি মূল্যের ৫২ শতাংশই ছিল আবগারি শুল্ক ও কর। ডিজেলে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ।
- সূত্র: রয়টার্স