ভারতের সম্বলে মসজিদ জরিপ সহিংসতায় ইন্টারনেট পরিষেবা, স্কুল বন্ধ
ভারতের উত্তর প্রদেশের সম্বল শহরে রোববার (২৪ নভেম্বর) সহিংসতার ঘটনায় ৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শহরে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সম্বলের জামে মসজিদে সিভিল জজ আদালতের নির্দেশে পরিচালিত একটি জরিপকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। জরিপ চলাকালীন কিছু হিন্দু গোষ্ঠী দাবি করে, একটি ধ্বংস হওয়া মন্দিরের স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবাদকারীরা, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম, পুলিশকে পাথর ছুঁড়ে মারলে পুলিশ পালটা কাঁদানে গ্যাস শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে ২০ পুলিশ সদস্য আহত হন।
তবে নিহত ৪ মুসলিম ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে মসজিদ ও শহরের অন্যান্য অংশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরে বাইরের লোক, সামাজিক কর্মী এবং রাজনীতিবিদদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ইন্টারনেট পরিষেবা এবং স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুলিশ সাতটি মামলা দায়ের করেছে এবং অন্তত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সম্বলের তাবেল কোট এলাকার ইদ্রো গাজির ৩৪ বছর বয়সী ছেলে নাঈম গাজি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। তিনি জানান, তার ছেলে প্রতিবাদে অংশ নেননি।
ইদ্রো গাজি অভিযোগ করে বলেন, নাঈম বাজারে তেল কিনতে গিয়েছিল।মসজিদের কাছে তাকে ঘিরে গুলি করা হয়।
শোকগ্রস্ত হলেও, তিনি ও তার পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাননি। ইদ্রো বলেন, "পুলিশ ও সরকারের সঙ্গে লড়াই করার সাহস আমাদের নেই।"
আরেক শোকার্ত পিতা নাফিস তার ২২ বছর বয়সী ছেলে বিলালকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, তার ছেলে কাপড় কিনতে গিয়েছিলেন এবং "পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে"।
তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, তারা প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলি চালায়নি।
সম্বল পুলিশ ২ হাজার ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, যার মধ্যে স্থানীয় সাংসদ জিয়া-উর-রেহমান বার্কও আছেন। তাদের অভিযোগ, বার্ক প্রতিবাদকারীদের উসকানি দিয়েছেন।
তবে বার্ক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, সহিংসতার সময় তিনি বেঙ্গালুরুতে একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি তার ফ্লাইট টিকিট দেখান।
এদিকে, উত্তর প্রদেশের বিরোধী দলগুলো ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করার জন্য রাজ্যের হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ তৌকির আহমেদ বলেছেন, মানুষ এতটাই ভয় পেয়েছে যে, তারা চারজনের মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলতেও সাহস পাচ্ছে না।
উত্তর প্রদেশের পূর্ববর্তী মুখ্যমন্ত্রী ও বার্কের দলের নেতা অখিলেশ যাদব রাজ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে "দাঙ্গা প্ররোচিত করার" অভিযোগ এনেছেন। তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যাদব প্রশ্ন তোলেন, কেন এত দ্রুত মসজিদটির জরিপ আয়োজন করা হয়েছিল?
সম্বলের শাহী জামে মসজিদ নিয়ে বিতর্ক ভারতব্যাপী মসজিদ নিয়ে চলা বিরোধের অংশ। কিছু হিন্দু গোষ্ঠী দাবি করছে, মুসলিম শাসকরা মন্দির ধ্বংস করে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
আদালত মসজিদে জরিপ চালানোর নির্দেশনা দিলে, সম্বলে ১৯ নভেম্বর উত্তেজনা শুরু হয়। আদালতের একটি আবেদনে বলা হয়েছিল, ১৬ শতকের মসজিদটি একটি হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে তৈরি। আদালতের নির্দেশের পর, উত্তর প্রদেশ কর্তৃপক্ষ জরিপ শুরু করে।
প্রথম জরিপের পাঁচ দিন পর অনুষ্ঠিত হওয়া রোববারের জরিপ সহিংস হয়ে ওঠে। প্রতিবাদকারীদের একটি বড় দল মসজিদের কাছে এসে জরিপ দলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।