ভারতের সম্বলে মসজিদ জরিপ সহিংসতায় ৫ জনের মৃত্যু, বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
ভারতের সম্বলের জামে মসজিদে সিভিল জজ আদালতের নির্দেশে পরিচালিত একটি জরিপকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনগুলো এই জরিপের তীব্র সমালোচনা করে সেটির বিরুদ্ধে "অপ্রয়োজনীয় তাড়াহুড়া" এবং "সংবিধানিক নীতির প্রতি অবজ্ঞা"র অভিযোগ তুলেছে।
মুসলিম সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলেছে– কেন মসজিদ কমিটির মতামত না শুনে জরিপের আদেশ দেওয়া হয়েছিল? তারা এ ঘটনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
জামায়াত-এ-ইসলামি হিন্দের সহ-সভাপতি মালিক মোতাসিম খান দ্য হিন্দুকে বলেন, "মসজিদ কমিটির মতামত শোনা ছাড়াই জরিপের আদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিচারিক ন্যায়ের এক গুরুতর অভাব প্রতিফলিত করে। সার্ভে (জরিপ) দলের সঙ্গে উসকানিমূলক অ্যান্টি-সোশ্যাল উপাদানের উপস্থিতি এবং তাদের আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। যার ফলস্বরূপ, এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে এবং নিরপরাধ মানুষ জীবন হারায়।"
জরিপটি প্রথম দিন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও, পরবর্তী দিন তা সহিংসতায় পরিণত হয়। স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা জরিপকে "প্ররোচিত জরিপ" বলে দাবি করে এর প্রতিবাদ জানান। জরিপ দলের সঙ্গে উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া ব্যক্তিদের উপস্থিতি দেখে মুসলিম বাসিন্দারা আপত্তি জানান এবং এর থেকে সহিংসতা শুরু হয়।
জামিয়াত উলমা-ই-হিন্দের সভাপতি মাহমুদ মাদানি প্রশ্ন তুলেছেন– কেন এই জরিপ সহিংসতায় রূপ নিল?
তিনি বলেন, "প্রথম দিন সম্বলের বাসিন্দারা আদালত-নিযুক্ত দলের সঙ্গে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই সহযোগিতা করেছিলেন। তবে ঘটনার দিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জরিপ দলের সঙ্গে কিছু ব্যক্তি উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলেন।"
মাদানি আরও বলেন, "কেন পুলিশ তাদের জরিপ দলের সঙ্গে যেতে অনুমতি দিল? কেন ওই বিশেষ সম্প্রদায়কে প্ররোচনামূলক স্লোগান দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করার সময় বাধা দেওয়া হয়নি?"
মাহমুদ মাদানি এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে এ ধরনের সহিংসতা ও উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখা যায়।
প্রতিবাদকারীদের হত্যার ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়ে মোতাসিম খান বলেন, "আমরা পুলিশের দায়ী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং নিহতদের পরিবারদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।"
খান আরও বলেন, "১৯৯১ সালের প্রার্থনার স্থান আইন [১৯৪৭ সাল থেকে ধর্মীয় স্থানগুলোকে তাদের অবস্থানে রক্ষা করে] অটুট রাখা অত্যন্ত জরুরি এবং এর মর্ম ও উদ্দেশ্যকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টাকে শক্তভাবে প্রতিরোধ করা উচিত।"
এছাড়া, তিনি মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানগুলোর প্রতি আক্রমণ এবং সেগুলোকে অবৈধভাবে অধিকার করার চেষ্টা নিয়ে সতর্কতা দেন। তিনি বলেন, "সরকার এবং বিচার বিভাগ মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে এই ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধ করবে এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
মাহমুদ মাদানি বলেন, "আমরা কোনো গোষ্ঠীর সহিংসতা সমর্থন করি না, তবে পুলিশের এ ধরনের পদক্ষেপকে আমরা দমনমূলক এবং বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখছি। এটি নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।"
তিনি আরও বলেন, "যতক্ষণ না সরকার ও আইন সংস্থা একটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসবে, ততক্ষণ এই ধরনের পদক্ষেপ জাতির শান্তি ও ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।"
মুসলিম সংগঠনগুলো ১৯৯১ সালের প্রার্থনার স্থান আইনকে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে।