অস্ট্রেলিয়া দিবস পরিবর্তনের দাবি: করোনা বিধি তোয়াক্কা না করে হাজারও বিক্ষোভকারীর র্যালি
করোনাকালে বড়জোর ৫০০ লোকের একত্রে জড়ো হওয়ার অনুমতি থাকলেও অস্ট্রেলিয়া দিবস পরিবর্তনের দাবিতে আজ (মঙ্গলবার) দেশটির সিডনিতে প্রায় ২ হাজার লোকের একটি র্যালি বের হয়। ওই র্যালি থেকে অন্তত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৭৮৮ সালে সিডনিতে ব্রিটেনের প্রথম নৌবহর আগমনের বার্ষিকী হিসেবে প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি পালিত হয় 'অস্ট্রেলিয়া দিবস'। তবে দিবসটি বিতর্কিত। বিভিন্ন মহলে দিবসটিকে অস্ট্রেলিয়ায় উপনিবেশের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া দিবস উদযাপনের সমালোচকেরা দিনটিকে 'আগ্রাসন দিবস' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
দেশটির আদিবাসীদের প্রতি হওয়া অবিচারের বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে এ দিন আয়োজন করা হয় বার্ষিক প্রতিবাদ সমাবেশ।
বছরের পর বছর ধরে আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের নেতৃত্বে 'তারিখ বদলাও' শীর্ষক এক প্রচারাভিযান জাতীয় দিবসকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতে দেশটির আদিবাসীদের অতীত ও ঐতিহ্যের স্বীকৃতি হিসেবে থাকে নানা আয়োজন। এ বছর সিডনিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়া দিবসের আয়োজন, যার মধ্যে ছিল ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী নাচ ও ধোঁয়া উৎসব।
করোনার কারণে অবশ্য কিছু রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
সিডনিতে আজ বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে 'সার্বভৌমত্ব সমর্পিত করা হয়নি' এবং 'ন্যায়বিচার নেই, শান্তি নেই' বলে স্লোগান দেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল 'এ দিন উদযাপনের নয়' ও 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
কর্তৃপক্ষ এ বছর বিক্ষোভকারীদের সংখ্যায় ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যদিও এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শহরে কোভিড-১৯-এর কোনো নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি।
জানা যায়, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ র্যালিতে অংশ গ্রহণ করেছে। আয়োজকরা বিক্ষোভকারীদের যেখানে সম্ভব মাস্ক পরতে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছিল।
যে শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর কথা জানা নেই, সেখানে উচ্চ তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও অংশগ্রহণকারীরা আয়োজকদের আহ্বান অনুসরণ করেন।
অবশ্য, দেশটির কুইন্সল্যান্ডে সমাবেশের ওপর কোভিড সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৫ হাজার লোক মধ্য ব্রিসবেনে র্যালি করেন।
এই তারিখে সরকারি ছুটি পরিবর্তন করা অথবা অস্ট্রেলিয়া দিবস পুরোপুরি বিলুপ্ত করা এই প্রতিবাদের মূল দাবি।
এবারের 'আগ্রাসন দিবস' সমাবেশে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, 'সত্যিকারের অস্ট্রেলিয়ানরা গণহত্যা উদযাপন করে না।'
কিন্তু এটিই একমাত্র বিষয় নয়। কুইন্স গার্ডেনে জনতা আদিবাসী অস্ট্রেলীয় নারী আন্টি শেরির নামে স্লোগান দেন, যাকে গত বছর ব্রিসবেনের একটি পুলিশ স্টেশনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশি হেফাজতে ক্রমাগত আদিবাসী মৃত্যু নিয়ে অনেক আগে থেকেই দেশটিতে আন্দোলন চলছিল; ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার সেই আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়া জুগিয়েছে।
দিবসটি ঘিরে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়ার সরকার এই ছুটির প্রতি তাদের সমর্থন বজায় রেখেছে এবং জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান এ দিবসকে 'অস্ট্রেলিয়া দিবস' রাখার পক্ষে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, প্রথম নৌবহর আসার ফলে অস্ট্রেলিয়া কতদূর অগ্রসর হয়েছে, দিবসটি সেই ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে। রাজধানী ক্যানবেরায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'এই বাস্তবতা থেকে পালানো বা এড়িয়ে যাবার কিছু নেই। ভালো হোক অথবা খারাপ, এটা ছিল সেই মুহূর্ত, যেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল আমাদের আধুনিক জাতির।'
- সূত্র: বিবিসি