আমিরাতের পর এবার ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাহরাইন ও ওমান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতই এবার ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের আরও দুটি আরব দেশ- বাহরাইন ও ওমান ।
ইসরাইলের গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক প্রকাশ্য ও আনুষ্ঠনিক করার বিষয়ে পরবর্তী আরব দেশ বাহরাইন হবে আশা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা বাহিনী প্রধান (মোসাদ) ইয়াসি কোহেন গত সপ্তাহের শেষে বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সালমান আল খলিফার সঙ্গে কথা বলেছেন। বাহরাইনের বাদশাহর মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শনিবার বাহরাইনের বাইরে একটি 'ব্যক্তিগত সফর' করেছেন।
রোববার ইসরায়েলের গোয়েন্দা মন্ত্রী এলি কোহেন দেশটির আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমিরাতের সঙ্গে এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় আরব উপসাগরীয় দেশ এবং আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে আরও চুক্তি হবে।'
কোহেন বলেন, 'আমি মনে করি বাহরাইন ও ওমান এখন নির্দিষ্টভাবে আলোচনায়। এছাড়াও আমার মূল্যায়ন হলো আগামি বছরগুলোতে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরনের শান্তিচুক্তি হবে, এদের মধ্যে সুদান প্রধান।'
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানায়, বাহরাইন এবং ওমান দু'দেশই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রশংসা করেছে, যদিও নিজেদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করেনি।
আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলের চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বাহরাইনের বাদশার কূটনৈতিক উপদেষ্টা এক টুইট বার্তায় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে স্যালুট জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আরেক আরব দেশ ওমান লাইনে রয়েছে। আবুধাবির চুক্তি নিয়ে মাস্কটের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে ইসরাইল-আমিরাতের চুক্তিতে সমর্থন জানানো হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের ঐতিহাসিক চুক্তির বিষয়ে সুলতানাতের (ওমান) সমর্থন রয়েছে।
সংযু্ক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও বিশেষ উপদেষ্টা জেরেড কুশনার বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ঘোষণা আগামি দিনগুলোতে হবে।
বলা হচ্ছে, নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনের আগেই ওমান সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিতে আসতে পারে। কুশনার বলছেন, অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর পর সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত কয়েক বছরে ইসরাইল প্রসঙ্গে খোলামেলা অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরাইলিদের সৌদি ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই সময় এক ইসরাইলি ব্লগারকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল রিয়াদ।
এদিকে মরক্কো, সৌদি আরব ও কাতারের সঙ্গেও সম্পর্ক জুড়তে চলেছে ইসরাইল- এমন তথ্য জানানো হয় জেরুজালেম পোস্টের ঐ প্রতিবেদনে। এসব আরব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। এখন শুধু প্রকাশ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তিতে আসবে তারা।
ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ডেভিড ইগাতিউস জানিয়েছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় যেসব মুসলিম দেশ তার সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে মরোক্কো, ওমান ও বাহরাইন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইল ও ইহুদি প্রশ্নে অনেক নমনীয় ভূমিকায় আছে মরোক্কো।ফিলিস্তিন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিক শান্তিচুক্তি বা পরিকল্পনার সমর্থক দেশটি। গত ফেব্রুয়ারিতে গুজব ওঠে পশ্চিম সাহারায় মরোক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে 'শান্তিচুক্তি' সই করে ইসরায়েল ও আমিরাত। ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের মধ্যে আমিরাতে এই চুক্তিকে 'প্রতারণার' শামিল আখ্যা দিয়ে একে 'পিঠে চুরি মারার' সঙ্গে তুলনা করেছে ফিলিস্তিনিরা।