ওয়েবসাইট থেকে ২০ হাজার পণ্য রিভিউ মুছে ফেলল আমাজন
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক তদন্ত প্রতিবেদনের পর আমাজন ২০ হাজার পণ্য রিভিউ তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ব্যবহারকারীরা প্রশংসনীয় রেটিং দেওয়ার বিনিময়ে লাভবান হন।
আমাজনের শীর্ষ ১০ ব্রিটিশ রিভিউয়ারের ৯ জনই স্বল্প পরিচিত চীনা ব্র্যান্ডের পণ্যে ফাইভ-স্টার রিভিউ দিয়েছেন। একই পণ্যগুলো বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে দেখা যায়, সেখানে রেটিংয়ের বিনিময়ে পণ্য কিংবা টাকা দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাজন ওই ব্যবহারকারীদের সাতজনের ২০ হাজার রিভিউ মুছে ফেলে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) তাদের এক গবেষণায় আমাজনের রেটিং বিশ্লেষণ করে। আমাজন পরবর্তীকালে সেই রেটিংগুলোও মুছে ফেলে।
আমাজনে পণ্যের র্যাঙ্কিং এলগরিদমে ওপরে ওঠা এবং "আমাজন'স চয়েজ" আখ্যা পাওয়া নির্ভর করে পণ্যের রেটিংয়ের ওপর।
ইউএসসি ও ইউসিএলএ-এর গবেষকরা লক্ষ্য করেন, এই গ্রুপগুলোর ২,৫০০টি এবং এ ধরনের পণ্যের ৮০ শতাংশই চীনের। তাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এ ধরনের মিথ্যা রিভিউ সাময়িকভাবে কোনো পণ্যের রেটিং বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি বৃদ্ধি করে।
তারা জানান, গবেষণার কাজে তারা যেই রিভিউগুলো পর্যালোচনা করছিলেন, এর এক তৃতীয়াংশই আমাজন সরিয়ে ফেলেছে। সেগুলোর বেশিরভাগই ফাইভ-স্টার রিভিউ ছিল।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমাজনের শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ রিভিউয়ার জাস্টিন ফ্রায়ার আগস্ট মাসেই ১৯,৭৪০ মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্যের রিভিউ দেন। পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল ১০টি ল্যাপটপ, ৩টি গেজবো, এমনকি পুতুলের ঘরও। তিনি গড়ে প্রতি পাঁচ ঘণ্টায় একটি রিভিউ দেন। তার রিভিউ করা অনেক পণ্যই পরবর্তীকালে তার ই-বে অ্যাকাউন্টে বিক্রির জন্য তালিকাবদ্ধ করা হয়।
বিনামূল্যে পণ্যের বিনিময়ে রিভিউ দেওয়ার ব্যাপারটি অবশ্য অস্বীকার করেছেন ফ্রায়ার। তার সঙ্গে যোগাযোগের পরই তিনি আমাজনে পোস্ট করা নিজের রিভিউ মুছে ফেলেন।
বেশ কয়েকজন প্রসিদ্ধ রিভিউয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারাও তাদের রিভিউ মুছে ফেলেন বলে জানায় ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
আমাজনের এক মুখপাত্র দ্য মার্কআপ'কে জানান, অনলাইনে প্রতারণা ঠেকাতে আমাজন ২০১৯ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। রিভিউ মূল্যায়নের কাজে অনেক মানুষ নিযুক্ত আছেন; সফটওয়্যারও ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে। সপ্তাহে মিলিয়নের বেশি রিভিউ মূল্যায়ন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ওই মুখপাত্র আরও জানান, এ ধরনের মিথ্যা রিভিউ দেওয়ার কারণে হাজারের বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আমাজনের মুখপাত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, 'আমরা চাই আমাদের গ্রাহকরা বিশ্বাসের সঙ্গে কেনাকাটা করবেন। তারা যেই রিভিউ দেখছেন তা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠানের নিয়মবিরুদ্ধ এসব কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।'
- সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার