করোনার বিরুদ্ধে অভাবনীয় সাফল্য ধরে রেখেছে ভিয়েতনাম
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস একটা বড় ধরনের ধাঁধা তৈরি করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। যদিও ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনে, এবং এটির অন্যতম হটস্পট এখন ভারত; তবু কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এটি খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি।
কোভিড-১৯ যখন দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, চীনের প্রতিবেশী ভিয়েতনাম এটাকে যেভাবে সামলিয়েছে, তার প্রশংসা হতে থাকে বিশ্বজুড়ে।
জানুয়ারির শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে যখন মাত্র দুজনের মৃত্যু হয়, তখনই সতর্ক হয়ে যায় ভিয়েতনাম সরকার। ২৩ জানুয়ারি উহান থেকে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে দেখতে ভিয়েতনামের হো-চি-মিন শহরে এলে তার শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই দেশটির সরকার জরুরি পদক্ষেপগুলো কার্যকর করা শুরু করে।
তাই শুরুতে হাতে গোনা কয়েকজন আক্রান্ত হলেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি দেশটিতে। আর সেই সাফল্য প্রায় ছয় মাস পরেও ধরে রেখেছে ভিয়েতনাম। ৯ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার ওই দেশে এখনো কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ প্রাণ হারাননি।
অন্যদিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০ ফুট উঁচু ভূখণ্ড থাইল্যান্ডে মারা গেছেন মাত্র ৫৮ জন। তবে লোকাল ট্রান্সমিশন বা স্থানীয় কোনো সংক্রমণ ঘটেনি দেশটিতে। মিয়ানমারে আক্রান্ত ৩১৭ জনের মধ্যে মারা গেছেন মাত্র ৬ জন। কম্বোডিয়ায় ১৪১ ও লাওসে ১৯ জন আক্রান্ত হলেও ওই দুটি দেশেও এ ভাইরাসে এখনো কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, এমনকি এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো লোকাল ট্রান্সমিশন হয়নি।
এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে। দেশ দুটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত ৬৮ হাজার আক্রান্ত ও ৩৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ফিলিপাইনে প্রায় সাড়ে ৫০ হাজার আক্রান্ত ও ১৩০০ জন মারা গেছেন।
এ ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট একনায়কতান্ত্রিক দেশ ভিয়েতনামের সাফল্য ব্যাখ্যা করা তুলনামূলক সহজ। দেশটির উত্তরেই রয়েছে চীন। দু'দেশের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। এ বছরের শুরুতে, ভাইরাসটি সম্পর্কে চীনের আশ্বাসের ওপর অন্ধের মতো ভরসা করেনি দেশটি; বরং মহামারি ছড়ানোর আশঙ্কা কতটুকু, সে সম্পর্কে তথ্য পেতে চালিয়েছে সাইবারঅ্যাটাকও।
করোনা রুখতে শুরুতেই দেশটি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। সরকার তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে জনগণকে রাখে ঘরবন্দী। আর আক্রান্তদের শনাক্ত করে রাখে আইসোলেশনে। তারই সুফল পেয়েছে দেশটি।
- সূত্র: ইকোনোমিস্ট ও রয়টার্স