কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারত শাসিত কাশ্মীরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই সিদ্ধান্ত আগামী সাতদিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনা করার রায় দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জারি করা ১৪৪ ধারাও আগামী সাতদিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনা করার রায় দিয়েছে আদালত।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকার বিরুদ্ধে করা আবেদনের ভিত্তিতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) এই রায় দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
শুক্রবার রয়টার্স এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। কাশ্মীরে গত ১৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে, যেটি ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ঘটনা।
গত বছরের ৫ই আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করার আগে ঐ অঞ্চলের ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ও ল্যান্ডলাইন সেবা বন্ধ করে ভারত সরকার।
এছাড়াও এই নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, “মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে ১৪৪ ধারা জারি করা যায় না। এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা যেতে পারে যখন হিংসা ও জনগণের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিপদ রয়েছে। ইন্টারনেট এই মুহূর্তে যোগাযোগ স্থাপনে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা নেয়। ভারতীয় সংবিধানের ১৯/ (১)/(এ) ধারা অনুযায়ী, এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে। সাময়িকভাবে এর ব্যবহার বন্ধ করা যায়, কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য যায় না। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় ইন্টারনেটের অপব্যবহারের সুযোগ সবচেয়ে কম। তার উপর ভরসা রেখে এসব জায়গায় ইন্টারনেট যোগাযোগ চালু করতে হবে।”
রায়ে বলা হয়, "কেবল বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ইন্টারনেট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার।"
ভারতের সংবিধানে বর্ণিত বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তার সাথে ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকার অধিকার সম্পৃক্ত বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় দেন যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা 'অনুমোদনযোগ্য নয়' এবং এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা কেবল 'সাময়িক' হতে পারে।
ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে কাশ্মীর অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যহত হয়েছে।
ঔপনিবেশিক আমলের আইনের ১৪৪ ধারা অনুযায়ী এক জায়গায় চার জনের বেশি একত্রিত হতে পারে না - সেই ধারা আরোপ করার সিদ্ধান্তও পুনর্বিবেচনা করার রায় দিয়েছে আদালত।
আদালত রায় দিয়েছে যে 'গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী বৈধভাবে মতপ্রকাশকে খর্ব করার' জন্য এই ধারার ব্যবহার করা যাবে না।
২০১৯ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে জম্মু ও কাশ্মীরকে দু'টি নতুন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে ভারতের সংসদ। ধারণা করা হচ্ছে যে ভারত শাসিত কাশ্মীরের ওপর ভারতের সরকারের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।