কেন্দ্রের চাপে বাংলাদেশের সঙ্গে রেলপথে বাণিজ্যের প্রস্তাব দিল পশ্চিমবঙ্গ
দুই দেশের মাঝে পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই চাপের মুখে রাজ্যের দক্ষিণের নদীয়া জেলার গেদে রেলস্টেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে রেলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালুর প্রস্তাব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন।
করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে একমাত্র পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সচল ছিল। কিন্তু, নানা রাজ্যের ট্রাক ড্রাইভার এবং পণ্য লোড-আনলোডে নিয়োজিত শ্রমিকদের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে, এমন আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এরপরেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য বাণিজ্য বন্ধ রাখে।
এনিয়ে গত ৬মে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার। পণ্য বাণিজ্য বন্ধ করে মমতা ব্যানার্জির সরকার ভারতকে নিজস্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে কেন্দ্র। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস প্রথম এই সংবাদ প্রকাশ করে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচল করার বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মাঝে চিঠি বিনিময় করা হয়েছে। এমনই এক চিঠিতে রাজ্যের পক্ষ থেকে গেদে স্টেশন ব্যবহার করে রেলপথে পণ্য বাণিজ্য চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এটি নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান।'
এর আগে গত ৬মে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহাকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ক্রসিং দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালু রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পরবর্তীতে তা চালু করার উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
ভাল্লা বলেন, এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ শুধু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রন্ত নির্দেশ ভঙ্গ করছে শুধু তাই নয়, বরং এটা ভারতীয় সংবিধানের ২৫৩, ২৫৬ এবং ২৫৭ নং অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন।
ওই চিঠির পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় আলাপন জানান, পেট্রাপোল বন্দর এলাকা উত্তর ২৪ পরগণার অধিবাসীদের অসন্তোষের মুখে রাজ্য সরকার পণ্য বাণিজ্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, পেট্রাপোলের বিষয়ে স্থানীয় জনমতের একটা বিষয় আছে। সীমান্ত এলাকার মানুষজন একটু বেশি আবেগী। পুরো বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চলছে। (বাণিজ্য চালুর) সম্ভাব্য সব উপায় বিবেচনা করে দেখার পর আমরা সঠিক সময়ে সীমান্তের দিকে নজর দিতে চাই। বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য নিয়ে বেশকিছু বিষয় আছে যা বিবেচনা করে দেখা দরকার। বিস্তারিত আলোচনার পড়েই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৯২১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ভারত। একইসময়ে আমদানি করে মাত্র ১২২ কোটি ডলারের পণ্য।