গ্রিশামের বইয়ে মেলানিয়া সম্পর্কে যেসব অজানা তথ্য জানা গেছে
হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মেলানিয়া ট্রাম্পের সিনিয়র সহকারি হিসেবে কাজ করার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টেফানি গ্রিশামের বই 'আই উইল টেক ইউর কোশ্চেনস নাও' প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার আগেই সিএনএন-এর হাতে এসেছে বইটির একটি কপি। সেখানে উঠে এসেছে মেলানিয়াকে ঘিরে ট্রাম্প পরিবারের নানা অজানা চমকপ্রদ ঘটনা।
এদিকে, প্রকাশিতব্য এই বইয়ের ব্যাপারে মেলানিয়া অফিসের দাবি, টাকার জন্যই মূলত গ্রিশাম ট্রাম্প পরিবার নিয়ে মিথ্যা ও মুখরোচক কাহিনী সাজিয়েছেন তার বইয়ে। নিজের দুর্বলতা এবং অদক্ষতা ঢাকতে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিয়েছেন গ্রিশাম, এমন কথাও বলা হয়েছে ট্রাম্প পরিবারের পক্ষ থেকে।
মেলানিয়া ট্রাম্পের সাবেক চিফ অব স্টাফ এবং হোয়াইট হাউজের সাবেক কমিউনিকেশন ডিরেক্টরের দায়িত্বে থাকাকালীন গ্রিশাম খুব কাছ থেকে দেখেছেন মেলানিয়াকে। সেই আলোকেই চলুন জেনে নেওয়া যাক মেলানিয়াকে নিয়ে গ্রিশামের দেওয়া কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো মেলানিয়া ট্রাম্পও খুটিয়ে খুটিয়ে তাকে নিয়ে প্রকাশিত লেখা পড়তেন
মেলানিয়া ট্রাম্প প্রায়ই ফার্স্ট লেডি হিসেবে প্রকাশ্যে হাজির হয়েছেন। সব সময় এক রকম গাম্ভীর্য নিয়েই তাকে প্রকাশ্যে আসতে দেখা গেছে; যেন আমেরিকানরা তাকে নিয়ে কী ভাবছেন এতে তার কিছুই যায় আসে না।
তবে গ্রিশামের মতে, ব্যাপারটি অবশ্য এমন ছিল না। মেলানিয়া ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে তার সম্পর্কে লেখা প্রতিটি ছোট বড় জিনিস মনোযোগ দিয়ে পড়তেন; এবং শুধু একবার না, কয়েকবার করে পড়তেন।
গ্রিশাম লিখেছেন, "তার স্বামী এবং তার সব বাচ্চাদের মতো, মিসেস ট্রাম্পও একজন বিশেষজ্ঞের মতোই মনোযোগ দিয়ে তার প্রেস ক্লিপিংগুলো যাচাই -বাছাই করতেন।"
"কোন বিবরণ উপেক্ষা করা হয়নি, কিছুই তার চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি। তিনি গুগল এলার্ট সেট করে রেখেছিলেন এবং নিজের সম্পর্কে প্রকাশিত সব কিছুই দেখতেন।"
মেলানিয়া ট্রাম্প, ওরফে 'রাপুনজেল', বেশিরভাগ সময়ই অফিসে থাকতেন না
মেলানিয়ার অফিসে কাজ করতে গিয়ে গ্রিশাম যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বারবার, তা হলো বস মেলানিয়া অধিকাংশ সময়ই অফিসে থাকতেন না।
গ্রিশাম বলেন, তার হোয়াইট হাউজে কাজ করার চার বছরের অভিজ্ঞতায় "মুষ্টিমেয় কয়েকবার" তিনি ফার্স্ট লেডিকে একটি প্রশস্ত অফিস স্যুটে তার কার্যালয়ে পেয়েছেন।
গ্রিশাম তার বইয়ে মজা করে লিখেছেন, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই তার বস হোম অফিস করতেন।
গ্রিশাম আরও লিখেছেন, মেলানিয়াকে তার সিক্রেট সার্ভিস "রাপুনজেল" ডাকনাম দিয়েছিল। কারণ তিনি তার টাওয়ারেই (বাসভবন) থাকতে বেশি পছন্দ করতেন, বাইরে খুব কমই আসতে দেখা যেতো তাকে।
মেলানিয়া নিজের যত্নেই দিনের পুরোটা সময় কাটিয়ে দিতেন। অফিসের কাজের চেয়ে দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে কাটানো, স্পা, ফেসিয়াল ট্রিটমেন্ট, সৌন্দর্য চর্চা ইত্যাদি বিষয়ে তার আগ্রহ ছিলো বেশি।
মেলানিয়া ইভানকা ব্যঙ্গ করে ট্রাম্পকে 'রাজকুমারী' ডাকতেন
গ্রিশামের বইয়ে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই নারী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং ইভানকা ট্রাম্পের মধ্যে কোনো মিল বা সমঝোতা নেই।
যদিও এই ব্যাপারটি সব সময় সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে রাখা হয়েছিল, কিন্তু এটিই সত্যি। ট্রাম্প পরিবারের প্রতিটি বিদেশ সফরেই হোয়াইট হাউজের কর্মীরা তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখতে পেয়েছে।
গ্রিশাম লিখেছেন, প্রায়শই ইভানকা ট্রাম্পের পাবলিক ইভেন্টগুলোতে এবং বিদেশ ভ্রমণে স্পটলাইটে থাকার আকাঙ্ক্ষার কারণে মেলানিয়ার সঙ্গে তার স্নায়ুযুদ্ধ লেগেই থাকতো।
এক সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে গ্রিশাম আবিষ্কার করেন, মেলানিয়া পর্দার আড়ালে ব্যাঙ্গ করে ইভানকার নাম দিয়েছিলেন "রাজকুমারী"।
মেলানিয়া ট্রাম্পের কুখ্যাত সেই জ্যাকেট
গ্রিশাম বেশ খানিকটা সময় ব্যয় করে তার বইয়ের একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় মেলানিয়ার বিতর্কিত সবুজ রঙের সেই "জ্যাকেট" নিয়ে লিখেছেন।
জ্যাকেটটির পেছনে লেখা ছিল, "আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার। ডু ইউ? অর্থাৎ, "আমি সত্যিই তোয়াক্কা করি না। আপনি করেন কি?"
এই জ্যাকেটটি পরেই মেলানিয়া টেক্সাসের একটি অভিবাসী ভোজন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত সংবাদমাধ্যম তার পোশাকে এরকম বার্তার সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। গ্রিশাম এবং মেলানিয়া টেক্সাস থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে, ফ্লাইটে বসেই পরিকল্পনা করতে শুরু করেন কীভাবে মিডিয়াকে অন্যদিকে ঘোরানো যায়।
গ্রিশাম আলোচনার এক পর্যায়ে লিখেছেন, মেলানিয়া ট্রাম্প জ্যাকেটের বার্তার "না" অংশটিকে কোনোভাবে ঢেকে দিতে বলেছিলেন, যেনো মিডিয়ার সমালোচনা থেকে তিনি সে যাত্রায় রক্ষা পেতে পারেন।
ফার্স্ট লেডি এবং গ্রিশাম যখন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসলেন, ততক্ষণে মেলানিয়ার সেই জ্যাকেটের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সব মিডিয়ায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে মোটেই খুশি ছিলেন না। তিনি তাদেরকে প্রেসিডেন্টের পশ্চিমের অফিসে ব্যক্তিগত ডাইনিং এ ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
গ্রিশামের ভাষায়, তিনি তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন এবং তারপর খুব বিরক্তি নিয়ে তাকালেন আমাদের দিকে।
প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে প্রথম যে কথাটি বেরিয়েছিল তা হলো, "তুমি আসলে কী ভেবেছিলে?"
গ্রিশাম লিখেছেন, "বিস্ময় নিয়ে দেখলাম, মিসেস ট্রাম্প ডানদিকে প্রেসিডেন্টের পাশের চেয়ারে বসেন (তখনও তিনি সেই জ্যাকেট পরেই ছিলেন), বসেই তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।"
- সূত্র: সিএনএন