চিকিৎসা ছাড়াই সেরে উঠল করোনায় আক্রান্ত নবজাতক
শিশুটি হয়তো দুর্ভাগা আবার একইসঙ্গে সে সৌভাগ্যবানও বটে। পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলেছে সে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহামারির কেন্দ্রভূমি চীনের উহান নগরীতে। জন্মের আগেই কন্যাশিশুটির বাবা-মা দু'জনেই করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হন।
করোনা আক্রান্ত বাবার ঔরশ আর মায়ের গর্ভের উত্তরাধিকার থাকায় তার প্রাণ সংশয় হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন স্থানীয় চিকিৎসকেরা।
উহান হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুটির করোনা টেস্ট করেন। স্বাভাবিকভাবেই টেস্টে নবজাতকের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
পিপলস ডেইলি জানায়, এমন অবস্থায় তাকে সঙ্গে সঙ্গেই উহানের বিশেষ শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে এরপর। নবজাতক মেয়েটি করোনা আক্রান্ত হলেও তার শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গগুলো অনুপস্থিতি দেখে শিশুটির চিকিৎসকরা তাকে জীবাণুরোধী ওষুধ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এসব ওষুধ এবং চিকিৎসা ছাড়াই কিছুদিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ১৭ দিন বয়সী নবজাতক কন্যাটি।
তার নাম দেওয়া হয়েছে জিয়াও-জিয়াও।
ডেইলি মেইল জানায়, চীনে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠাদের মধ্যে জিয়াও-জিয়াও সর্ব কনিষ্ঠ। এদিক থেকেও তার প্রাণশক্তি আর ভাগ্য সকলকে অভিভূত করে।
উহান শিশু হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের পরিচালক ডক্টর ঝেং লিয়াংকং বলেন, জন্মের পরের পরীক্ষাতেই জিয়াওয়ের শ্বাসনালীতে করোনা ভাইরাসের ইনফেকশন ধরা পড়ে। হৃদযন্ত্র ছিল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবে নবজাতকের মাঝে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মাঝে দেখা যাওয়া নানাবিধ শারীরিক উপসর্গ যেমন; নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর বা সর্দি লক্ষ্য করা যায়নি।
এ কারণেই চিকিৎসকেরা তাকে ওষুধ না দিয়ে নিজে থেকেই সেরে ওঠার সুযোগ দেন- রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভিকে ঝেং এসব কথা বলেন।
ঝেং আরও জানান, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় কন্যাশিশুটি শুধু সেরেই ওঠেনি। বরং সে আরও প্রাণবন্ত এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে ওঠে। তার শারীরিক উন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করে গত শুক্রবার আরও তিনবার তার করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হয়।
তিনটি টেস্টেই করোনার অস্তিত্ব না ধরা পড়ায় একইদিন বিকেলে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জিয়াও জিয়াও করোনা থেকে সেরা ওঠাদের মধ্যে কনিষ্ঠ হলেও, সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ৯৬ বছরের এক বৃদ্ধা। আক্রান্ত হওয়ার পর টানা তিনদিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাটিয়ে তিনি আরোগ্য লাভ করেন।
করোনা ভাইরাসে চীনে গত রোববার নাগাদ দুই হাজার ৯১২ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০ হাজার ব্যক্তি। এই মহামারির কবলে চীনের অর্থনীতি প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।