চীন, ইরানের গুপ্তচরবৃত্তি ও মিয়ানমার, ইথিওপিয়ার সহিংসতার জন্য ফেসবুককে দায়ী করলেন হাউগেন
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে, তা প্রমাণে মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট উপ-কমিটির শুনানিতে নতুন এক বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু ইস্যুতে ফেসবুকের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।
ফেসবুকের সাবেক এই প্রোডাক্ট ম্যানেজার জানান, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ায় চলমান সহিংসতা এবং চীন ও ইরানের গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে ফেসবুকের নানা কাজের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
হাউগেন বলেন, "আমার ভয় হচ্ছে, মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করার মতো ও চরমপন্থী যেসব আচরণ আমরা দেখছি, এটা মাত্র শুরু। মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার ঘটনাগুলো এমন এক ভয়ঙ্কর গল্পের আরম্ভ যে, কেউ এর শেষটা পড়তেও চাইবে না।"
২০১৮ সালে ফেসবুক স্বীকার করে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল বা বিকৃত তথ্যের প্রচার রুখে দিতে তারা যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর ফেসবুক প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা ভুল তথ্য প্রচার রোধে পদক্ষেপ নেবে।
বিশ্বের 'স্বৈরাচারী বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত নেতারা' ফেসবুককে তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেন কি না, জনৈক মার্কিন সিনেটরের এমন প্রশ্নের জবাবে হাউগেন বলেন, সন্ত্রাসীরা অবশ্যই ফেসবুককে ব্যবহার করে এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে ভালোমতোই অবগত।
শেষবার হাউগেন কাজ করেছেন ফেসবুকের 'কাউন্টারএসপিওনেজ বা গুপ্তচরবৃত্তি-বিরোধী' টিমের সাথে। হাউগেনের ভাষ্যে, এই প্ল্যাটফর্মটিতে চীনাদের অংশগ্রহণ, বিশেষত, উইঘুর সম্প্রদায় ইস্যুতে নজর রেখেছে তার টিম।
গত মার্চে ফেসবুকের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, চীনা হ্যাকাররা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে দেশের বাইরে বসবাসরত উইঘুর কর্মী ও সাংবাদিকদের টার্গেট করে।
হাউগেন আরও জানান, ইরান সরকারের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করেছে তার টিম।
চলতি গ্রীষ্মে, ফেসবুকের সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি তদন্তকারী টিমের প্রধান, মাইক দিভিলিয়ানস্কি ইরানের গুপ্তচরবৃত্তি ক্যাম্পেইনের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় ২০০টি অ্যাকাউন্ট ডিজ্যাবল করেন। ইরানের টার্গেটের শিকার হয়েছেন, এমন দুইশো ব্যক্তির অ্যাকাউন্টকে তারা বিষয়টি অবহিত করেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এ ধরনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে, ফেসবুকের 'কাউন্টারএসপিওনেজ ইনফরমেশন অপারেশন অ্যান্ড টেরোরিজম টিম'-এ পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় না বলে দায়ী করেন হাউগেন।
ফ্রান্সেস হাউগেনের ফাঁস করা বিভিন্ন তথ্যের সূত্র ধরে, কানেক্টিকাট ডেমোক্র্যাট ও সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল পরামর্শ দেন, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এদিকে ফ্রান্সেস হাউগেনের শুনানিকে কেন্দ্র করে একটি বিবৃতি দিয়েছে ফেসবুক। ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন এক টুইট বার্তায় দেওয়া বিবৃতিতে লেখেন, "আজ সিনেট কমার্স উপ-কমিটিতে ফেসবুকের একজন সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজারের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মী দুই বছরেরও কম সময় ফেসবুকে কর্মরত ছিলেন। তার কোনো সরাসরি রিপোর্ট ছিল না, কোনোদিন সি-লেভেল এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে কোনো ডিসিশন-পয়েন্ট মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেননি এবং ছয়বারেরও বেশি সময় তিনি এ ইস্যুতে কাজ করতে অস্বীকৃতির কথা জানিয়েছেন। ফেসবুকের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, আমরা তার সাথে একমত নই। তবে একটি ব্যাপারে আমরা একমত, ইন্টারনেট জগতের জন্য নতুন নিয়মের মানদণ্ড তৈরি করার এখনই সময়।"
- সূত্র: সিএনএন