জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ আসবে কোথা থেকে
কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে আজকের আলোচ্য বিষয় ছিল অর্থায়ন। আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক পরিচালনা করেছেন আজকের পর্ব।
সুনাক বলেন, আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বের সম্পদকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেটাই এ মুহূর্তে অর্থমন্ত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি উভয় উৎস থেকে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনটি প্রধান খাত থেকে অর্থায়নের পরামর্শ দেন সুনাক। যেগুলো হচ্ছে-
রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ: সুনাক বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনাভাইরাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের "দ্বৈত ট্র্যাজেডি"-র মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জি-২০ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে আগামী পাঁচ বছরে মোট ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জি-২০ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে এই অনুদান যত তাড়াতাড়ি প্রয়োজন তত তাড়াতাড়ি পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সুনাক।
বেসরকারি বিনিয়োগ: সুনাক বলেন, মোট ১৩০ ট্রিলিয়ন সম্পদের উপর বসে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বজুড়ে নেট শূন্য নির্গমনের জন্য মূলধনের প্রাচীর গড়ে তুলতে সক্ষম।
আর্থিক ব্যবস্থার সবুজায়ন: সুনাক বলেন, পুরো বিশ্বের অর্থব্যবস্থাই নেট শূন্য নির্গমনের জন্য পুনর্নির্মিত হবে। এই অর্থব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে আরও উন্নত জলবায়ু তথ্য, সার্বভৌম সবুজ বন্ড এবং বাধ্যতামূলক স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা।
এই খাতে যুক্তরাজ্য তার নিজস্ব ভূমিকা পালন করছে এবং যুক্তরাজ্য বিশ্বের প্রথম শূন্য নির্গমনের আর্থিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে দাবি করেন সুনাক। তিনি জানান, সংস্থাগুলো কীভাবে নিজেদের কার্বনমুক্ত করে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করবে সেটির পরিকল্পনা করাটা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং এটি নিরীক্ষণের জন্য একটি স্বাধীন টাস্কফোর্সও গঠন করা হবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থায়নে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি:
রিশি সুনাক বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো কোভিড সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের "দ্বৈত ট্র্যাজেডি" দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এই কারণেই, বিশ্বের বৃহত্তম ২০ অর্থনীতি নিয়ে গঠিত জি-২০'র দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নের অংশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলার অনুদান প্রদানের লক্ষ্য পূরণ করতে চলেছে।
এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৫ সালে।
সুনাক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান, এবং জি-২০'র পক্ষ থেকে আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৫০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিনিয়োগ প্রয়োজন:
সুনাক বলেন, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা দেখে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "গ্লাসগোর শীর্ষ সম্মেলনই প্রথম সম্মেলন যেখানে আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বের সম্পদকে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত সে নির্দেশনা নিতে অর্থ ও ব্যবসা খাতের নেতারা একত্রিত হয়েছেন।"
ব্রিটিশ চ্যান্সেলর আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকারী এবং বেসরকারি উভয় খাত থেকেই বিনিয়োগ স্থাপন করাটা এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, "ছয় বছর আগে প্যারিসে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, আজ গ্লাসগোতে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ব্যবস্থা করছি আমরা।"
তিনি জানান, গ্রামীণ আফ্রিকার স্কুল ও হাসপাতালগুলোর জন্য কম দামে বিদ্যুৎ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোয় উন্নত উপকূলীয় প্রতিরক্ষার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে এসব বিনিয়োগের ভেতর। এছাড়া বিশ্বের সর্বত্র সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি, শ্বাস নেওয়ার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস, বসবাসের জন্য উত্তাপযুক্ত ঘরের ব্যবস্থাও করা হবে এসব বিনিয়োগের মাধ্যমে।