কপ-২৬: জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্যসেবা তৈরির অঙ্গীকার বাংলাদেশসহ আরও ৪৯টি দেশের
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর। এমতাবস্থায়, গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬ এ জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক ও 'লো-কার্বন' স্বাস্থ্যসেবা নির্মাণের অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশসহ আরও ৪৯ টি দেশ।
সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ থেকে ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব দেশের জনসাধারণের স্বাস্থ্য সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন কিছু দেশও আছে এই তালিকায়।
এদের মধ্যে ৪৫টি দেশ ইতোমধ্যে তাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও টেকসই এবং স্বল্প-কার্বনযুক্ত করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে কিংবা তার আগেই কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছে ১৪টি দেশ।
যুক্তরাজ্য সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) এবং হেলথ কেয়ার উইদাউট হার্ম (এইচসিডব্লিউএইচ)-এর মতো হেলথ গ্রুপগুলোর সমন্বিত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে 'কপ-২৬ হেলথ প্রোগ্রাম'। এই প্রোগ্রামের আওতায় উল্লিখিত অঙ্গীকার করে দেশগুলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, "স্বাস্থ্যসেবা খাতের ভবিষ্যত এমনভাবে তৈরি করা উচিত যা মহামারি, অতিমারি এবং অন্যান্য জরুরি অবস্থার মুখে টিকে থাকতে পারে। আবার একই সাথে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া এবং বায়ু দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকা রোগবালাইসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও যেন মোকাবিলা করতে পারে।"
"তাছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি সমাধান হিসেবেও ভূমিকা পালন করতে হবে। যেসব দেশ আজ জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক এবং 'লো-কার্বন' স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য অঙ্গীকার করেছে, আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশও একই পথ অনুসরণ করবে", যোগ করেন গেব্রেয়াসুস।
লো-কার্বন ও টেকসই স্বাস্থ্যসেবা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যেসব দেশ, তার মধ্যে আছে আর্জেন্টিনা, ফিজি, মালাওয়ি, স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ৩৯টি দেশ।
এদিকে নিজেদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছে যেসব দেশ, তার মধ্যে আছে বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, মালদ্বীপ ও নেদারল্যান্ডসসহ আরও ৪৫টি দেশ।
যুক্তরাজ্যের ফরেইন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের ইউরোপ ও আমেরিকা বিষয়ক মন্ত্রী ওয়েন্ডি মর্টন মন্তব্য করেন, "সাধারণ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে চাইলে স্বাস্থ্য খাতে দৃঢ় নেতৃত্ব তৈরি হওয়া প্রয়োজ়ন। আর তার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে হবে এবং স্বাস্থ্য খাতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।"
জাতীয় পর্যায়ে এসব অঙ্গীকারের বাইরেও আরও ২১টি দেশের ৫৪টি প্রতিষ্ঠান, যারা কিনা ১৪,০০০ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করছে; তারাও ইউএনএফসিসিসি'র 'রেস টু জিরো'তে যোগ দিয়েছে এবং কার্বন নিঃসরণ কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে রেকর্ড সংখ্যক নেতা এবার কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তাছাড়া স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে তারা বিভিন্ন দেশের সরকারকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
চলমান কপ-২৬ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবাকে বিজ্ঞান-সম্পর্কিত শীর্ষ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ খাতের একটি হিসেবে ধরা হয়েছে।
কপ-২৬ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ ও শেয়ারহোল্ডারদের এখানে যুক্ত করতে ডব্লিউএইচও, এইচসিডব্লিউএইচ এবং ইউএনএফসিসিসি ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়নস-এর সাথে মিলে কাজ করছে কপ-২৬ প্রেসিডেন্সি।