জলবায়ু সংক্রান্ত নথি ফাঁস: জ্বালানির মূল উৎস কয়লাই থাকবে ভারতের
নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ-২৬) দেশগুলোকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর নির্দেশ দেওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘের।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে জাতিসংঘ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকলেও পর্দার আড়ালে অনেক দেশই চাইছে এই পরিকল্পনা আলোর মুখ না দেখুক। এজন্য জাতিসংঘের কাছে তদবিরও করছে তারা। বিবিসি কর্তৃক ফাঁসকৃত নতুন কিছু নথিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
নথিতে উঠে এসেছে, ভারত ইতোমধ্যেই জাতিসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত কয়লাই ভারতের সিংহভাগ অংশে আলো জ্বালিয়ে রাখবে।
জীবাশ্ম জ্বালানি-বিরোধী অবস্থান নেওয়া থেকে জাতিসংঘকে বিরত রাখতে চাওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি ভারতও।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরে ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ।
জলবায়ু অ্যাকশন ট্র্যাকারের (সিএটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ ক্ষমতার ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য এবং পারমাণবিক শক্তিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ভারত।
কিন্তু জ্বালানি খাতে দেশটি এখনো প্রায় পুরোপুরিই কয়লার উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রীয় গ্রিডের ৭০ শতাংশ জ্বালানি কয়লা থেকে পাওয়া ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ভোক্তা।
গ্লাসগোতে শীর্ষ সম্মেলনের আগে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সংকলনকারী বিজ্ঞানীদের দলকে ভারত বলেছে, তাদের জন্য কয়লা ছেড়ে দেওয়াটা কঠিন হবে।
এসব প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের গতি কমিয়ে আনার সর্বোত্তম পন্থা বের করার চেষ্টা করেছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টার-গভমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)।
ফাঁস হওয়া নথিতে ভারতের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ মাইনিং অ্যান্ড ফুয়েল রিসার্চের একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, "ভারতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে যথেষ্ট উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত কয়লাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান ভিত্তি হয়ে থাকবে।"
সিএটির অনুমান অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তাদের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৫০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনবে। কিন্তু দেশের নেট কার্বন নিঃসরণ কীভাবে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে তা এখনো ব্যাখ্যা করতে পারেনি ভারত।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লা ভোক্তা ও কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্র চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এবং এই লক্ষ্যে তারা দেশে কয়লার চাহিদাও কমিয়ে এনেছে। যে কারণে, এখন ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের উপরই জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে।
সূত্র: বিবিসি।