জাহাজ মুক্ত, ফের সচল সুয়েজ
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আটকে থাকার পর সুয়েজ খালে কনটেইনারবাহী জাহাজ 'এমভি এভার গিভেন' কে সরানো হয়েছে। ফলে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যিক নৌপথে পুনরায় চলাচল শুরু হয়েছে।
পণ্য পরিবহনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ সুয়েজ খালে গত ২৩ শে মার্চ থেকে এমভি এভার গিভেন আড়াআড়িভাবে আটকা পড়ে থাকায় ভূমধ্যসাগর থেকে খালের উত্তরে এবং লোহিত সাগর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৩৬০ টি জাহাজের যাতায়াত স্থবির হয়ে পরে।
মিশরে খালের হোল্ডিং জোনের মধ্যেও আরো অনেক জাহাজ আটকা পড়ে যায়। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে সমুদ্রে আটকা পড়া এসব সম্পদের মোট মূল্য প্রায় ৩ বিলিয়ন থেকে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ওসামা রাবি রবিবার মিশরের এক্সট্রা নিউজকে জানান, সুয়েজের প্রবেশমুখে কমপক্ষে ৩৬৯টি নৌযান অপেক্ষা করছে যার মধ্যে কয়েক ডজন কনটেইনার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার, তেলবাহী ট্যাঙ্কার এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বা তরল পদার্থ পরিবহনকারী (এলপিজি) জাহাজ রয়েছে।
মিশরীয় এবং আন্তর্জাতিক নৌযান উদ্ধার দল এসে আংশিকভাবে জাহাজগুলোকে মুক্ত করতে শুরু করে।
৪০০ মিটার লম্বা এবং ৫০০ মিটার প্রশস্ত এমভি এভার গিভেনের ধারণক্ষমতা দুই লাখ ২০ হাজার টন।
জাহাজটিকে উদ্ধার করতে যেসব কৌশল ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে অন্যতম টাগবোটের ব্যবহার। সপ্তাহব্যাপী ড্রেজিং এবং খননের পর, সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী দল এবং ডাচ ফার্ম স্মিট সালভেজের একটি দল সোমবার ভোরে টাগবোট দিয়ে টেনে জাহাজটিকে আংশিকভাবে সরাতে সমর্থ হয়।
জোয়ার শুরু হলে কয়েক ঘন্টার প্রচেষ্টার পর টাগবোট দিয়ে বাকিটুকু টেনে দেবার ব্যবস্থা করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, জাহাজটিকে মুক্ত করতে ৩০ হাজার কিউবিক মিটারের মতো বালু অপসারণ করা হয়।
কিন্তু ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন যে এখানকার অবরুদ্ধ অবস্থা এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। কারণ জাহাজের সামনের অংশ এখনো খালের প্রান্তদেশে আটকে আছে এবং উদ্ধারকারীরা এখন জাহাজের ভার কমাতে এর ভেতরে থাকা কন্টেইনারগুলো সরিয়ে ফেলার কথা ভাবছে।
যদিও খালের মধ্য দিয়ে সাধারণত দৈনিক ১ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পারাপার হয়, কিন্তু উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে ইউরোপে রপ্তানির ৮০ শতাংশই মিশর দিয়ে পার হয় বলে জানিয়েছেন রিস্টাড এনার্জির পলা রদ্রিগেজ।
মেরিন ট্রাফিকের দেয়া তথ্যমতে, গত রবিবার পর্যন্ত ১০০ টির মতো তেল বা রিফাইনড পণ্যবাহী জাহাজ হোল্ডিং এরিয়ায় আটকে ছিল। সুয়েজ খালে প্রতিবন্ধকতার ফলে বুধবার অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যায়, তবে পরদিন আবার সেই দাম কমে যায়।
পণ্য ছাড়াও রোমানিয়া থেকে ১১ টি জাহাজে পাঠানো ১ লাখ ৩০ হাজার পশুও সেখানে আটকা পড়ে আছে।
পশুগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য গবাদিপশুর খাদ্যসহ চিকিৎসকের ৩ টি দল পাঠিয়েছে মিশর।
বিখ্যাত সুইডিশ আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জা প্রতিষ্ঠান আইকিয়া জানিয়েছে, এভার গিভেন ও অন্যান্য জাহাজে তাদের ১১০ টি কন্টেইনার আটকা পড়ে রয়েছে।
আইকিয়ার একজন মুখপাত্র জানান, চলমান করোনা মহামারির ফলে পণ্য পরিবহনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে সুয়েজ খালের এই অবরুদ্ধ অবস্থা আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে তাদের।
রটারডামভিত্তিক দ্য ভ্যান রীস গ্রুপ জানায়, তাদের ৮০ টি চা পাতার কন্টেইনার সমুদ্রে ১৫ টি জাহাজে আটকে রয়েছে। এর ফলে তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার শঙ্কায় রযেছেন।
নর্থ-ওয়েস্ট ইংল্যান্ডের কাঠ ব্যবসায়ী ডেভ হিলটনও জানালেন একই উদ্বেগ। তাদের ফ্রেঞ্চ ওক কাঠের একটি শিপমেন্ট আটকে গেছে সেখানে।
ডেভ জানালেন তিনি ক্রেতাকে সুয়েজ খালের এই প্রতিবন্ধকতার কথা বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা সেটা মানতে রাজি নন।
চলমান এই সংকটের ফলে মায়েরস্ক এর মতো শিপিং কোম্পানিগুলো তাদের যাত্রাপথ বদলে ফেলেছে যা তাদের নির্ধারিত ভ্রমণ সময়কাল আরো অন্তত সাতদিন বাড়িয়ে দিবে।
মায়েরস্ক জানায় এভার গিভেনকে আংশিক সরানো হয়েছে কিন্তু তারপরও অন্তত ৩-৬ দিন লেগে যাবে বাকি সব জাহাজের জট সরাতে। সুয়েজ খালের এই জটের ফলে এ সপ্তাহ শেষে ৩২ টি মায়েরাস্ক ও তাদের অংশীদারি জাহাজ সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এললয়েড এর তালিকা অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ জাহাজেরই যাত্রাপথে বা পণ্য পরিবহনে বিলম্ব সম্পর্কে কোন বীমা করা ছিল না।