ট্রাম্পের সফরের মাঝেই অগ্নিগর্ভ দিল্লি, নিহত ১৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মাঝেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পক্ষে-বিপক্ষে সংঘর্ষে রণক্ষেত্র জাফরাবাদ এলাকা।
সোমবার প্রকাশ্যেই চলে গুলি। এমনকি রাতেও নতুন করে গোলাগুলি হয়েছে। এ ঘটনার রেশ চলছে মঙ্গলবার সকালেও। এ সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে এক পুলিশসহ ১৩ জনের, আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৬০ জন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লির পরিস্থিতির পর্যলোচনায় দ্বিতীয় বৈঠক করেছেন তিনি।
সিএএ পন্থী ও বিরোধী সমর্থকদের সংঘর্ষে একাধিক এলাকায় জ্বলছে আগুন। পরপর পুড়েছে গাড়ি, দোকান। কয়েকটি বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোড়া হয় পেট্রোল বোমাও। পরিস্থিতি সামলাতে সোমবারই নামানো হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী। অবস্থা এতটাই খারাপ যে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সব স্কুল ও অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর জিনিউজ ও হিন্দুস্তান টাইমসের।
দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। এ ঘটনায় পুলিশসহ ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মাথায় লাঠি বা পাথরের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ওই পুলিশকর্মীর। নিহত বাকিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
সংঘর্ষের সময় দেখা যায়, গায়ে লাল টি-শার্ট, গাল ভর্তি দাড়ি এমন এক যুবক পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করছেন। সোমবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর ও জাফরাবাদ এলাকায় অশান্তির ঘটনায় সেই যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার সিএএএর পক্ষের একটি দল মৌজপুর ট্র্যাফিক সিগন্যালের কাছে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের একটি দলকে পাথর দিয়ে হামলা করে। একটি গাড়ির জানালা ক্ষতিগ্রস্ত করার পরে সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। এই সহিংসতার জন্য সিএএ পক্ষের দলকে দায়ী করেছে বিরোধীরা।
সিলামপুর, মৌজপুর ও জাফরাবাদ - আশেপাশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ভুক্ত ঘরবাড়ি ও দোকানগুলিতে জাফরানি রঙের পতাকা উড়তে দেখা গেছে। দাঙ্গার সময় ঘরগুলো চিহ্নিত করতে এবং সিএএ সমর্থক গোষ্ঠীগুলো থেকে তাদের রক্ষা করার প্রয়াস হিসাবে দেখা হচ্ছে।
জাফরাবাদের এক স্কুল শিক্ষিকা আমিনা সুবহান হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, কেন এই দলগুলো হিন্দু বাড়িগুলোতে জাফরানী পতাকা উড়াচ্ছে? এই সহিংসতা সুপরিকল্পিত এবং সংগঠিত, বিজেপি নেতা মিশ্রের উস্কানির প্রত্যক্ষ ফলাফল। রোববার তিনি তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শোধ নেওয়ার জন্য মিছিল করলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সিএএ বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে দমন করার এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ এই সহিংসতা।
এ অঞ্চলে উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ এবং দোকান মালিকদের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। জাফরাবাদ সংলগ্ন সিলামপুরের বাসিন্দা কমলেশ কুমার বলেন, দাঙ্গার পরিস্থিতি আর ব্যাপক সহিংসতার কারণে আমরা আতঙ্কের মধ্যে বাস করছি। আর এই সহিংসতায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা রীতিমতো অবাক করার মতো। মনে হচ্ছে বিজেপি দিল্লির জনগণকে বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট না দেওয়ার জন্য শাস্তি দেওয়ার মুডে আছে।
তবে এই দায় সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা রঘুবীর সিং বলে, দেখুন, এরা (মুসলিম বাসিন্দারা) জাফরাবাদকে এক আধা-পাকিস্তানী এলাকায় পরিণত করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল আর রাহুল গান্ধীর প্রত্যক্ষ মদদে প্রতিবাদের নামে সহিংসতা আর সন্ত্রাস ছড়িয়েছে এরা। নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহ'র আমলে এই হাস্যকর কর্মকাণ্ড আমরা সহ্য করবো না।
দিল্লি পুলিশ পরে এই এলাকাগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি করে। জাফরাবাদ পুলিশ স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, এলাকাবাসী এই জায়গাকে একটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। আমাদের লোকবলও কম। এই পরিস্থিতিতে আমরা কিই বা করতে পারি?
এই সহিংসতা নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জে কিশান রেড্ডিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ট্রাম্প ভারত সফরে এসেছেন। এসময়ে এমন সহিংসতা বিশ্ব দরবারে ভারতকে বদনাম করার পায়ঁতারা ছাড়া আর কিছুই নয়।