তালেবান নিয়ন্ত্রণের ৩ দিন: কেমন অবস্থা কাবুলের অভ্যন্তরে
"গতকালের তুলনায় কাবুলের পরিস্থিতি আগের চেয়ে বেশ ভাল", মঙ্গলবার আফগানিস্তানের রাজধানী শহরে বসবাসকারী একজন সাংবাদিক মার্কিন গণমাধ্যম এনপিআরকে (ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও) পাঠানো বার্তায় এমনটিই বলেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে এনপিআর সে সাংবাদিকের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তবে কাবুলে ধীরে ধীরে আগের অবস্থা ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, "রাস্তায় অধিক সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে। কয়েকটি ক্লিনিক, ছোট মার্কেট এবং কাবুলের ভিতরে কিছু দোকানপাটও খোলা ছিল। আমি রাস্তায় একজন নারীকে দেখেছি, একই সাথে কয়েকজন তরুণ আফগানকে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরিহিত অবস্থায় শহরে হাঁটতে দেখেছি"।
তবে বেশিরভাগ আফগানই তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে এবং তালেবানদের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশে তাদের ভবিষ্যত কেমন হবে- তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬–২০০১ সাল পর্যন্ত যে ৫ বছর তালেবান ক্ষমতায় ছিল, সে সময় আফগানিস্তানের নারীদের চাকরি করার সুযোগ ছিল না। ঘরের বাইরে বের হতে হতো বোরকা পরে, পুরুষ সঙ্গী নিয়ে। এর অন্যথা হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো।
তবে 'বর্বরতা'র জন্য পরিচিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী দাবি করেছে যে, এবারের শাসন হবে অনেকটাই ভিন্ন। তালেবান এবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, নারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখাবে তারা।
এর আগে গত সোমবার আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় কাবুল বিমানবন্দরে। মঙ্গলবারের কাবুল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি বর্ণনা করে এই সাংবাদিক জানান, "এখনো সেখানে মানুষের ভিড় রয়েছে"।
পাশাপাশি বাতাসে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। "আমার মনে হয় এটি একটি হুঁশিয়ারি ছিল আফগানদের প্রতি- যেন তারা ঘরে ফিরে যায়"।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, বিমানবন্দরটি নিরাপদ রয়েছে এবং মানুষকে সরিয়ে নেবার গতি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। রাতের ভিতর প্রায় ৭০০ জন যাত্রীকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং কর্মকর্তারা প্রতিদিন ৯০০০ মানুষকে সরানোর টার্গেট নিয়েছেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি এনপিআরকে বলেছেন, কাবুল বিমানবন্দরে যেসব তালেবান নেতারা বিমানবন্দরের পেরিমিটার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের সাথে মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা যোগাযোগ করে চলেছেন।
এদিকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর শহরজুড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে তালেবান। এমনকি বিমানবন্দরে প্রবেশের সবগুলো মুখেই তাদের পাহারা রয়েছে।
ফলে যেসব আফগান দেশ ছাড়তে চান, তাদের এসব তল্লাশি চৌকি পার হয়ে যেতে হচ্ছে।
শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা, খুব একটা গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায় নি।
মানুষজন ভীত এবং যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই সবাই ঘরের ভেতরেই থাকছেন।
বিবিসি সংবাদদাতা মালিক মুদাচ্ছের জানান, শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে তালেবান, এমনকি যান চলাচল ব্যবস্থারও। তাদের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে, প্রতিটা মোড়ে তারা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
- সূত্র- এনপিআর ও বিবিসি