দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাজ কী?
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় চারজন বাংলাদেশি প্রবাসীকে অপহরণ করা হয়। তার মধ্যে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে, ব্যবসায়ী আবুল বাসার লাভলুকে (৩৭) পুড়িয়ে মারা হয়। যারা উদ্ধার হয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রিটোরিয়ার জাকারান্দাতে নিজ দোকান থেকে অপহৃত হওয়ার পর লোকমান হুজুরকে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।
তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিপণ দিয়ে বেঁচে ফিরেছেন, এমনটা ঘটনা অনেকের সঙ্গে ঘটেছে। এমনটা বলছে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি। যদিও যারা অপহরণের শিকার হয়েছেন, তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। অভিযোগ আছে, তাদের কোনো প্রশাসনিক সহযোগিতা দিতে দূতাবাস এগিয়ে আসেনি। প্রবাসীদের খোঁজ-খবর রাখেন না হাইকমিশনার।
সাধারণ বাংলাদেশিদের জন্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সহজ কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চাইলে সঠিক সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে গেলেও দূতাবাস থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না।
প্রবাসীদের অভিযোগ, দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিদিষ্ট দলের কিছু প্রবাসী রাজনীতিক ও আদম দালালের হয়ে কাজ করছেন। তাদের স্বার্থ্য রক্ষা করে চলছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন শীত মৌসুম চলায় প্রচুর স্থানীয় ও বিদেশি আক্রান্ত হচ্ছেন করোনাভাইরাসে। প্রচুর বাংলাদেশি ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন; এ পর্যন্ত মারা গেছেন তিনজন।
প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রবাসীরা যথাযথ দিক-নির্দেশনা পাচ্ছেন না। করোনাভাইরাস শুরুর দিকে দূতাবাস থেকে একটি সর্তক বার্তা দিয়েই যেন সব দায়িত্ব শেষ করেছে!
দক্ষিণ আফ্রিকায় কতজন বাংলাদেশি প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত এবং তাদের চিকিৎসা বিষয়ে জানাতে দেশটির প্রিটোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর খালেদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জনৈক ফেসবুকার মোহাম্মদ হিমেলের ব্যক্তিগত সেলফোন নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন!
হিমেল জানান অন্য ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেসব সাংবাদিক বাংলাদেশি গণমাধ্যমে কাজ করেন, তাদের ওপর দূতাবাসের প্রধান কর্মকর্তা হাইকমিশনার সাব্বির আহাম্মেদ চৌধুরী সন্তুষ্ট নন! অতীতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা নিয়ে তিনি ও তার অধীনস্তরা গণমাধ্যমের ওপর নাখোশ। বিভিন্ন ধরনের কথা বলে যুক্তি তুলে মোহাম্মদ হিমেল দূতাবাস কর্মকর্তাদের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি গণমাধ্যমে কাজ করেন, এমন কয়েকজন বলেছেন, মিডিয়াকে পাস কাটিয়ে দালাল, ফেসবুকার ও কিছু রাজনীতিককে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে দূতাবাস। সেই সিন্ডিকেটের বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে ফেসবুকে দূতাবাসের বিভিন্ন খবর, আপডেট ও সর্তকবার্তা প্রাবাসীদের মধ্যে প্রচার করা হয়।
করোনাকালে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যেসব প্রবাসী পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিয়েছিলেন, সেগুলো ইতোমধ্যে দূতাবাসে এসে পৌঁছেছে। যেহেতু দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে তা সংগ্রহ করা এই মুহূর্তে ঠিক হবে না, তাই অনেক সাধারণ প্রবাসী দূতাবাসের তৃতীয় সচিব কামরুল আলম খানসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কোন উপায়ে তাদের পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে, সেটি জানার জন্য। কয়েক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করা হলেও দূতাবাসের লোকজন কোনো প্রকার সাড়া দেননি কিংবা পরামর্শ দেওয়ার আগ্রহ দেখাননি বলে অভিযোগ প্রবাসীদের।
এমনিতেই দক্ষিণ আফ্রিকা অপরাধপ্রবণ দেশ। প্রতিদিন এখানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের খবর গণমাধ্যমে উঠে আসছে। স্বভাবতই প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নিরাপদ নন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয়, বাংলাদেশি ও বিভিন্ন অপরাধীদের চক্রগুলোর কাছে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ প্রবাসীরা। কেউ ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। কাউকে অপহরণ করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবরদখল হয়ে যাওয়া যেন নিত্য ঘটনা! কাউকে আবার গুলি করে হত্যা হয়। এতকিছুর পরও দূতাবাসের নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রবাসীরা।
এছাড়াও দূতাবাসের ভেতর দালাল ও মাদকসেবীদের দেখা গেছে। যেসব প্রবাসী পাসপোর্ট নবায়ন করতে সেখানে গিয়েছেন, যারা ফরম পূরণ করতে পারেন না, তাদের দশ রেন্ড স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়ে সহযোগিতা করেন দালাল।
এসব বিষয়ে জানতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাব্বির আহাম্মদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সেলফোনে একাধিকবার কল দিলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।