দিল্লিতে প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় পরীক্ষা করছে দাঙ্গাবাজরা
নয়াদিল্লিতে ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পুরোধা বিজেপির সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এখন দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের মাঝেই সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থীদের সংঘর্ষের জেরে উত্তর-পূর্ব দিল্লি এখন কার্যত রণক্ষেত্র।
এই পরিস্থিতিতে সেখানে কর্তব্যরত সাংবাদিকরাও পড়েছেন প্রাণের হুমকিতে। হিন্দুত্ববাদী সিএএ বিরোধী সশস্ত্র দাঙ্গাবাজের দল সেখানে সাংবাদিকের পেশার চাইতে তার ধর্মীয় পরিচয় পরীক্ষা করে দেখতেই বেশি উৎসাহী।
এমনই এক ঘটনায় প্রায় প্রাণ সংশয়ের মুখে পড়েছিলেন দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিনিধি সৌম্য পিল্লাই এবং ফারিহা ইফতেখার।
তারা এসময় সহিংসতা মুখর ভজনপুরা এলাকায় মোটরকারে চড়ে যাচ্ছিলেন। পথে একদল দাঙ্গাকারী তাদের পথরোধ করে। এই অবস্থায় কোনো রকমে গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে পালিয়ে বেঁচে গেছেন এই দুই সাংবাদিক। কিন্তু সশস্ত্র দাঙ্গাবাজদের দুটি মোটরসাইকেল তাদের কারটিকে ধাওয়া করে।
পিল্লাই বলেন, ওই এলাকা থেকে গাড়ি চালিয়ে বের হয়ে আসার পড়েই আমাদের ধাওয়া করা বন্ধ করা হয়।
ভজনপুরা এলাকায় দায়িত্ব পালনরত অন্য সাংবাদিকরা জানান, সেখানে প্রথমেই ধর্মীয় পরিচয় ও তার স্বপক্ষে প্রমাণ দেখাতে বলছে হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা । যারা পরিচয় দেখাতে পেরেছেন সংঘর্ষস্থলে থাকা এমন সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন বা নোটবুক ব্যবহার না করতেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে। খবর দ্য নিউজ মিনিট ও হিন্দুস্তান টাইমসের।
হিন্দুস্তান টাইমসের অপর প্রতিনিধি অনভিত শ্রীবাস্তব এনিয়ে আরেক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
এই সাংবাদিক বলেন, তারা আমাকে থামিয়ে ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। এসময় আমি তাদের পরিচয়পত্র দেখাই। কিন্তু এরপরও আমি যে সত্যিই একজন হিন্দু সেটা প্রমাণ করার জন্য দাঙ্গাবাজেরা তিলক বা পৈতার মতো কোনো ধর্মীয় চিহ্ন দেখানোর জন্য হুমকি দিতেই থাকে। এমন কোনো চিহ্ন আমি দেখাতে ব্যর্থ হলে তারা আমি কেন তিলক ধারণ করিনি তা নিয়ে বকাঝকা করতে থাকে। দাঙ্গাবাজরা লোহার রডের মতো অস্ত্র নিয়ে থাকায় পরিস্থিতি হয়তো গুরুতর আকার ধারণ করতে পারতো। এই অবস্থায় কিছু দাঙ্গাকারী পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে আমাকে ছেড়ে দিতে বলে।
শুধু হিন্দুস্তান টাইমস নয়, হামলা, হুমকি এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন আরও অনেক সংবাদকর্মী। নিজেদের পরিচয় ঢাকতে অনেক দাঙ্গাকারী এখন মোটর সাইকেল হেলমেট এবং মাস্কের সাহায্যে নিজেদের চেহারা ঢেকে লাঠি ও লোহার রড হাতে এসব হামলা করছে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতা কাভার করার সময় এমন হামলার শিকার হন এনডিটিভির দুই সাংবাদিক আরবিন্দ গুনাশেকর এবং সৌরভ শুকলা। তারা একটি মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ভিডিও করছিলেন।
বিক্ষোভাকারীদের বেদম পিটুনির শিকার এই দুই সাংবাদিকের প্রাণরক্ষা হয় তাদের নারী সহকর্মীর চেষ্টায়। মারিয়াম আলভী নামক ওই এনডিটিভি প্রতিবেদক বিক্ষোভকারীদের কাছে অনেকবার অনুরোধ করে তাদের প্রাণরক্ষা করেন। উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ব্যাপারে আলভী বলেন, আমার সহকর্মীরা যে বিপদজনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন তার তুলনায় আমার অভিজ্ঞতা কিছুই নয়। আমি ভাগ্যক্রমে কোনো রকম গুরুতর জখমের শিকার হইনি।
এই ব্যাপারে তীব্র ধিক্কার জানিয়ে টুইট করেন এনডিটিভির নির্বাহী সম্পাদক নিধি রাজন। টুইট বার্তায় তিনি বলেন, দাঙ্গাবাজরা যখন বুঝতে পারে 'এরা হিন্দু এবং এরা আমাদেরই লোক' তখনই তাদের মারধর থেকে রেহাই দেওয়া হয়। এই ঘটনার নিন্দা করার ভাষাও আমার নেই।
মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ আকাশ নামক জেকে ২৪/৭ নিউজের অপর এক গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকের ছবি ভারতের সামাজিক গণমাধ্যমে দেখা গেছে।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় নামে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক আলোকচিত্রির অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। মঙ্গলবার সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলেও ধরেছে দৈনিকটি।
সেখানে তিনি লিখেছেন, হিন্দু সেনার (উগ্রবাদি দল) এক সদস্য আমি যেন সহজে কাজ করতে পারি এজন্য আমার মাথায় তিলক পড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে পরবর্তী সময়ে অনিন্দ্য একটি আগুন লাগা ভবনের ছবি তুলতে গেলে তাকে জেরার মুখে ফেলে হিন্দু সেনার সদস্যরা। "তারা বলে হিন্দু হয়ে তুমি কেন এসব ছবি তুলছ? নিশ্চয় তুমি হিন্দু নও।"
এসময় তার পড়নের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় পরীক্ষা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনিন্দ্য।