পানশির দখলে তালেবানকে সাহায্য করেছে পাকিস্তান?
পানশির উপত্যকা দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে তালেবান। তবে এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে যে, পানশিরসহ আরও কিছু অভিযানে ড্রোন হামলার মাধ্যমে তালেবানকে সাহায্য করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান সরকার অস্বীকার করলেও এ অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ড্রোন হামলার ব্যাপারে অভিযোগগুলো কী?
আফগানিস্তানের সর্বশেষ তালেবান-বিরোধী ঘাঁটি পানশিরে গত কয়েক দিন ধরেই যুদ্ধ চালিয়ে আসছে তালেবান সেনারা। কাবুলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পানশিরের তালেবান-বিরোধী ঘাঁটিগুলোকে উদ্দেশ্য করে ড্রোন হামলার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
আফগান সাংবাদিক তাজউদ্দীন সোরেশের বরাত দিয়ে পানশিরের গভর্নর কামালউদ্দিন নিজামী বলেছিলেন, "পাকিস্তান ড্রোন দিয়ে আফগানিস্তানের পানশির উপত্যকায় বোমা হামলা চালিয়েছে।"
এছাড়া পানশিরের অনেকেই আকাশপথে আক্রমণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন, যা করার ক্ষমতা তালেবানের নেই। এখান থেকে দুইয়ে দুই মিলিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানই সাহায্য করছে তালেবানকে।
ইরানি ও ভারতীয় গণমাধ্যমও দাবি করেছে, পানশিরের যুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে প্রমাণস্বরূপ তারা যেসব ছবি দেখিয়েছে সেগুলো অনেকাংশেই বিভ্রান্তিকর।
পাকিস্তান এবং তালেবান উভয় কর্তৃপক্ষই এসব অভিযোগকে অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র, জেনারেল বাবর ইফতিখার বিবিসিকে বলেছেন, এগুলো "সম্পূর্ণ মিথ্যা" এবং এসব "ভারতের অযৌক্তিক প্রোপাগান্ডা"।
তিনি বলেন, "আফগানিস্তানের ভিতরে যা ঘটছে তার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা পানশির হোক বা অন্য কোথাও।"
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলো পূর্বে বহুবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে সাহায্য করার অভিযোগ এনেছে, যা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের কি নিজস্ব ড্রোন আছে?
হ্যাঁ, পাকিস্তানের নিজস্ব ড্রোন আছে।
২০১৫ সালের মার্চে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে জানায় যে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলে জঙ্গিদের ওপর আক্রমণে ড্রোন ব্যবহার করছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।
এ অভিযানে দেশে নির্মিত বুরাক ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল, যা লেজার-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে।
এরপর এমন খবরও পাওয়া গেছে যে তুরস্ক বা চীন অথবা উভয়ের সহায়তায় দূর পাল্লার ড্রোন সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান। গত বছর চীনের তৈরি উইং লুং ২ ড্রোন কিনেছে পাকিস্তান, এমন খবরও পাওয়া গিয়েছিল।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চীনের তৈরি সিএইচ-ফোর ড্রোন কিনেছে পাকিস্তান, যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং আক্রমণ উভয় কাজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ড্রোন ব্যবহার করেই ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে থাকে সৌদি আরব।
আফগানিস্তানে কি আসলেই পাকিস্তান ড্রোন হামলা করেছে?
এই মুহূর্তে, এই দাবির পিছনে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। কেনো এরকম আক্রমণ পরিচালনা করবে পাকিস্তান, সে ব্যাপারেও কোনো শক্ত যুক্তি নেই।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের ড্রোন প্রোগ্রামের ওপর নজরদারি করে আসা একটি সূত্র সম্প্রতি পাকিস্তানে সিএইচ-ফোর ড্রোনের একটি ছবি প্রকাশ করেছে।
এ বছরের ১২ই জুলাই গুগল আর্থের মাধ্যমে বাহাওয়ালপুরের কাছে একটি বিমান ঘাঁটি অনুসন্ধান করে চারটি ড্রোন চিহ্নিত করা গেছে।
এটি পাকিস্তানের ড্রোন সক্ষমতার ব্যাপারে সবাইকে পুনঃনিশ্চয়তা দিলেও কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, পানশিরে এসব ড্রোন ব্যবহার করেছে পাকিস্তানি বাহিনী।
লন্ডন-ভিত্তিক রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্কও এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছেন।
তিনি জানান, চীনের তৈরি সিএইচ-ফোর একটি চীন পরিচালিত স্যাটেলাইট যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দূরপাল্লার লক্ষ্যমাত্রা চিহ্নিত করে থাকে।
"নিজেদের সীমান্তের বাইরে পাকিস্তান কোনো অভিযান চালাতে চাইলে সে ব্যাপারে চীনের সম্মতি দেওয়ার কথা না," বলেন ব্রঙ্ক।
"সেক্ষেত্রে সিএইচ-ফোরকে একটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সরাসরি লাইন-অব-ভিউ রেডিও কন্ট্রোলের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হবে। পাকিস্তানি সীমান্ত থেকে উল্লেখযোগ্য দূরত্বে অবস্থিত দুর্গম অঞ্চলে এভাবে সংযোগ স্থাপন করা খুবই কঠিন, কিন্তু অসম্ভব না।"
ড্রোন হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের কী লাভ?
এছাড়া এরকম আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানের কী লাভ, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ইসলামাবাদ ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ড. মারিয়া সুলতান বলেন, "পাকিস্তানের [ড্রোন] সক্ষমতা আছে কি নেই সেই প্রশ্ন পরে, আগে এ ধরনের হামলা চালানোয় কোনো কৌশলগত সুবিধা আছে বলে মনে তো হচ্ছে না।"
আফগানিস্তান কে নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা যখন ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে, তখন সেখানে অভিযান চালানোটা যুক্তিযুক্ত না বলে মনে করছেন জাস্টিন ব্রঙ্কও।
"কৌশলগতভাবে এই মুহূর্তে পাকিস্তানিদের এরকম সরাসরি হস্তক্ষেপ করাটা আসলেই ঠিক শুনায় না।"
সূত্র: বিবিসি।