পৃথিবীর সমুদ্রতল মাপছে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের রোবট
চাঁদ বা মহাকাশ সম্পর্কে পৃথিবীর শীর্ষ বিজ্ঞানীরা যতটুকু জানেন, সেই তুলনায় সমুদ্রের গভীর তলদেশ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি খুবই কম। এখনও অজানা রয়ে গেছে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ সমুদ্রতল। সাগরের গভীরতা বিপদসংকুল হলেও তা দিয়ে অভিযাত্রী মানুষের অদম্য কৌতূহল দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যুগে যুগে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে নিত্য-নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের সাহায্য নিয়েছে।
এমনই এক উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৬ সালে। হিউস্টনভিত্তিক ওশেন ইনফিনিটি নামের একটি কোম্পানি ২০৩০ সালের মাঝেই সমুদ্রতলের পুরো রহস্য উদঘাটনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সময়ের মাঝে সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরিতে ব্যবহার হবে ‘আরমাডা’ নামে স্বচালিত ১১টি বিশাল নৌযানের এক বহর।
আনক্রুড সার্ফেস ভেসেল (ইউএসভি) বা মানব চালকহীন যানগুলো স্যাটেলাইট সংযোগ দ্বারা পরিচালিত। ইউএসভিগুলো পুরো পৃথিবীর সবগুলো মহাসাগর ঘুরে সোনার বা শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রতলের পরিষ্কার চিত্র তৈরির কাজ করবে। একটি কেন্দ্রীয় পরিচালনা কেন্দ্র থেকে মনুষ্য চালকেরা প্রয়োজনে ইউএসভির গতিবিধি মনিটর করতে পারবেন। খবর ডেইলি মেইলের।
সোনার ছাড়াও থাকবে অত্যাধুনিক অন্যান্য সেন্সর ও সরঞ্জাম। সাগরের ৬ হাজার মিটার নিচের পরিবেশ সম্পর্কে সঠিক চিত্র ধারণের জন্য ইউএসভিগুলোতে থাকবে বিশেষ কিছু রোবট। নতুন ধরনের যে সোনার ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো মাল্টি বিম, মাল্টি ইকো সাউন্ডার প্রযুক্তির। এর মাধ্যমে একাধিক উৎস থেকে প্রতিধ্বনিত শব্দের উৎস ও তরঙ্গভেদ বিশ্লেষণ করা যায়।
এ ব্যাপারে ওশেন ইনফিনিটির শীর্ষ নির্বাহী অলিভার প্লানকেট বিবিসিকে বলেন, আমরা নানা মাপের মোট ১১টি রোবট অর্ডার করেছি। সবচেয়ে ছোটটির আকার হচ্ছে ২১ মিটার আর সবচেয়ে বড়টি হবে ৩৭ মিটার (১২১ ফুট) দৈর্ঘ্যের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন,এর মাধ্যমে সমুদ্রে ডুবে থাকা অগণিত জাহাজ এবং উড়োহাজাজের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। এমন অনুসন্ধানে অনেক রহস্যময় দুর্ঘটনার রহস্য উন্মোচনেও নতুন গতি আসবে। যেমন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের হারিয়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বিমান এমএইচ৩৭০-এর হদিশ মিলতে পারে।
পাশাপাশি এমন অনুসন্ধানের বাণিজ্যিক মূল্যও কম নয়। পৃথিবীব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ দিতে সমুদ্রতলে বিছানো হয়েছে দীর্ঘ ফাইবার অপটিক কেবল লাইন। আরও আছে টেলিকম, বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং তেলের পাইপলাইন। রোবোটিক যান উন্মোচন করবে এসব স্থাপনার বর্তমান হালচিত্র। পৃথিবীর যোগাযোগ এবং আর্থিক স্থাপনার নিরাপত্তায় নতুন গতি সঞ্চার করার আশাও দেখাচ্ছে এই উদ্যোগ।