ফেরেটের দেহে করোনা সংক্রমণ রুখে দিচ্ছে ন্যাজাল স্প্রে: গবেষণা
গবেষণাগারে ফেরেটের (বিড়ালজাতীয় প্রাণী) ওপর এক ধরণের ন্যাজাল স্প্রে প্রয়োগ করে দেখা গেছে তা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সক্ষম। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই গবেষণাটি শুধু প্রাণীদেহের ওপরেই চালানো হয়েছে এবং এখনো 'পিয়ার-রিভিউড' জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তবে এনিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এই স্প্রে যদি মানবদেহেও একইভাবে কাজ করে, তবে তা দৈনন্দিন ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করবে। জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের ইমিউনোলজির চেয়ারম্যান ড. আরতুরো কাসাডেভাল জানান, 'করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম এমন নতুন কিছু আবিষ্কার আশার সঞ্চার করে। মহামারির বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে এটি।'
নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার, কর্নেল ইউনিভার্সিটি এবং নেদারল্যান্ডের ইরাসমাস মেডিক্যাল সেন্টার গবেষণাটি পরিচালনা করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার এই গবেষণায় অর্থায়ন করে।
গবেষণাটিতে দেখা যায়, স্প্রে সরাসরি ভাইরাসকে আক্রমণ করে। স্প্রে-র একটি উপাদান লিপোপেপটাইড ভাইরাসের অ্যামিনো এসিডের স্পাইক প্রোটিনের সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। এই স্পাইক প্রোটিনের সাহায্যেই ভাইরাসটি জীবকোষে আক্রমণ করে। ভাইরাস জীবকোষে আক্রমণের আগেই ন্যাজাল স্প্রের লিপোপেটোটাইড স্পাইক প্রোটিনের অ্যামিনো এসিড চেইনের সাথে অনেকটা জিপের মতো সংযুক্ত হয়ে সংক্রমণ রোধে সক্ষম।
গবেষণাটি প্রি-প্রিন্ট সার্ভার বায়ো আর্কাইভে প্রকাশের পর 'সায়েন্স' জার্নালে পিয়ার রিভিউয়ের জন্য জমা দেয়া হয়েছে।
বেয়লর কলেজ অব মেডিসিনের ন্যাশনাল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিন ড. পিটার জে. হতেজ জানান, গবেষণাটি বেশ আশাপ্রদ। কত সহজে এর উৎপাদন সম্ভব তা জানতেই আগ্রহী আমি এখন।
ছয়টি ফেরেটের (বিড়ালজাতীয় প্রাণী) ওপর গবেষণাটি চালানো হয়। স্প্রে দেয়ার পর প্রতি খাঁচায় দুটি করে তিনটি খাঁচায় তাদেরকে রাখা হয়। প্রতিটি খাঁচায় পরবর্তীতে প্লেসবো স্প্রে দেয়া দুটি ফেরেট এবং সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সংক্রমিত একটি ফেরেট রাখা হয়।
২৮ ঘণ্টা পর প্লেসবো স্প্রে দেয়া ফেরেটগুলো সংক্রমিত হলেও স্প্রে দেয়া ফেরেটরা সংক্রমিত হয়নি। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, 'ভাইরাস সংক্রমণকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। গবেষণাটির সাথে যুক্ত ড. মসকোনা জানান, ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্প্রের কার্যকারিতা থাকে। তিনি বলেন, 'এটি যদি মানবদেহেও একই ভাবে কাজ করে, সংক্রমিত ব্যক্তির আশেপাশে অবস্থানেও মানুষ সুরক্ষিত থাকতে পারবে।'
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইন এবং সার্স ও মার্স ভাইরাস নিয়েও গবেষণাটি চালানো হয়েছে। সার্স, মার্স সহ বর্তমান মহামারির সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সকল ধরণের স্ট্রেইনের বিরুদ্ধেও এই স্প্রে কার্যকর সুরক্ষা দেয়।
ড. মসকোনা এবং ড. পোরোত্তো ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ ও বংশবিস্তার প্রতিরোধে সক্ষম স্প্রে বানানোর কাজ করছেন। ইতোপূর্বে তারা হাম, নিপাহ ভাইরাস ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়েও কাজ করেছেন।
ড. পোরোত্তো জানান, হামের ভ্যাকসিন থাকায় এবং নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ ও মালেয়শিয়ায় মতো দেশে হঠাৎ হঠাৎ আবির্ভূত হওয়ায় এই পণ্যগুলোর ব্যবসায়িক মূল্য ছিলনা।
ড. মসকোনা জানান, স্প্রের উপাদান লিপোপেপটাইড ভ্যাকসিনের মতো শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। শুকনো পাউডার হিসেবেই বহন করা যায়। ফলে দরিদ্র দেশগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ফ্রিজে করে ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হবেনা, সেখানে এই স্প্রে সহজেই পাঠানো যাবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরই দরিদ্র দেশগুলো আমেরিকার মতো দ্রুত ভ্যাকসিন পাবেনা, কোনো অঞ্চলে কখনোই ভ্যাকসিন না পৌঁছাতে পারে। তার এই গবেষণা সফল হলে এসব দেশেই স্প্রে পাঠাতে চান বলে জানান তিনি।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস