ফেসবুকের গোপন নথি ফাঁস: ‘নিরাপত্তার চেয়ে মুনাফাকেই প্রাধান্য দেয় ফেসবুক’
ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও বিভিন্ন চর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে একেক পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। কিন্তু গোপন এসব তথ্য কার মাধ্যমে গণমাধ্যম ও আইনজীবীদের হাতে গিয়ে পৌঁছাল তা এতদিন জানা যায়নি। অবশেষে আত্মপ্রকাশ করেছেন গোপন নথি ফাঁসকারী ফেসবুকেরই সাবেক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেন। রোববার রাতে মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএসে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তার চেয়ে ফেসবুক মুনাফাকেই প্রাধান্য দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৩৭ বছর বয়সী ফ্রান্সিস ফেসবুকের সিভিক ইন্টিগ্রিটি টিমে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন।
সিবিএসের 'সিক্সটি মিনিটস' অনুষ্ঠানের সাক্ষাৎকারে হাউগেন বলেন, চলতি বছরের মে মাসে ফেসবুকের কার্যক্রমে হতাশ হয়ে চাকরি ছাড়েন তিনি। যাওয়ার আগে অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু নথি ও মেমো কপি করে নেন।
নথিগুলো দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে প্রকাশ করেন তিনি। গত তিন সপ্তাহ ধরে এসব নথির ওপর ভিত্তি করে গণমাধ্যমটি একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে। ফেসবুকের নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায় ফেসবুক তাদের সেলিব্রিটি, রাজনীতিবিদ এবং হাই প্রফাইল ব্যবহারকারীদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে থাকে। নথি থেকে দেখা যায় যে 'ক্রস-চেক' নামের একটি সিস্টেম এসব অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়, নয়তো একেবারেই ব্যবহৃত হয় না।
ফাঁস হওয়া আরেক নথিতে দেখা যায়, ফেসবুকের অংশীদাররাই প্রতিষ্ঠানটিকে মামলার মুখোমুখি করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ডেটা স্ক্যান্ডালের জন্য ফেসবুককে ৫ বিলিয়ন ডলারের মোটা জরিমানা গুণতে হচ্ছে স্রেফ মার্ক জাকারবার্গের জন্য। জাকারবার্গকে একা এত বড় দায় থেকে বাঁচাতেই ইউএস ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে প্রতিষ্ঠানটি মোটা এই জরিমানা দিচ্ছে।
তবে, ইন্সটাগ্রামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের মূল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, তাদের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। তরুণদের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম 'বিষাক্ত' হিসেবে উঠে আসলেও ফেসবুক এই ফলাফল প্রকাশ করেনি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, জরিপে অংশ নেওয়া ৩২ শতাংশ কিশোরী নিজেদের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগে বলে উঠে এসেছে।
বুধবার সিনেটে "অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা" শীর্ষক এক শুনানিতে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে ইন্সটাগ্রামের প্রভাব নিয়ে ফেসবুক পরিচালিত গবেষণার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন হাউগেন।
গত সপ্তাহে ফেসবুক নির্বাহীরা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের জানান যে গবেষণায় তরুণদের ওপর ইনস্টাগ্রামের ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও প্রতিবেদনে তা বলা হয়নি।
তবে, হাউগেন তার সাবেক নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে বলেন, "জনসাধারণের জন্য কোনটি ভালো আর ফেসবুকের মধ্যে কোনটি ভালো, এই দুই বিষয়ে অন্তর রয়েছে।"
"আরও বেশি টাকা উপার্জনের মতো স্বার্থসিদ্ধিতে ফেসবুক প্রতিবার নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়," বলেন তিনি।
জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলের সহিংসতা নিয়েও মুখ খুলেন হাউগেন। ফেসবুকই ক্যাপিটল হিলের বিক্ষোভে আগুনে ঘি ঢেলেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি জানান, ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন চলাকালে ভুয়া তথ্য প্রচার ঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা নেয়।
"ইলেকশন শেষ হওয়ার পরেই তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। নিরাপত্তার চেয়ে নিজেদের মুনাফাকে প্রাধান্য দেয় তারা। বিষয়টি গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল," বলেন তিনি।
- সূত্র: বিবিসি