বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া শর্ত পূরণ করেছে চীনা ভ্যাকসিন
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/04/02/fd81ba0c-a243-4f67-b931-113bdee3e055_0414f0b9.jpg)
সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাক নামক দুটি কোম্পানির তৈরি ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া শর্ত পূরণ করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভায়জরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস এর চেয়ারম্যান।
সেইসাথে কোভ্যাক্স উদ্যোগে সংযোজনের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চীনা দুটি কোম্পানির তৈরিকৃত ভ্যাকসিন দুটি।
বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সরবরাহের লক্ষ্যে গঠিত জোটই হল কোভ্যাক্স। এ উদ্যোগের আওতায় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।
সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাক এর উৎপাদনকারীরা গত সপ্তাহে স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভায়জরি গ্রুপের অব এক্সপার্টস এর কাছে ভ্যাকসিন দুটি সম্পর্কে তথ্যাবলি তুলে ধরেন।
স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভায়জরি গ্রুপ অব এক্সপার্টের (এসএজিই) চেয়ারম্যান আলেসান্দ্রো ক্রাভিয়োতো বুধবার বলেন, 'জনসম্মুখে ওই দুটি কোম্পানি যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তাদের বানানো ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচও'র এর বেঁধে দেয়া সকল শর্ত পূরণ করার মত কার্যকারিতা রাখে,' বলেন তিনি।
'৫০- ৭০ শতাংশ কার্যকারিতা তো অবশ্যই আছে। তাদের কাছে নিরাপত্তাজনিত সকল তথ্যও রয়েছে যা প্রমাণ করে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারে মানুষের কোনো ক্ষতি হবেনা।'
এ মাসের শেষের দিকেই প্যানেল থেকে চীনা ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানান ক্রাভিয়োতো।
গত মার্চে ডব্লিউএইচও জানায়, চীনের দুটি ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের আওতায় ব্যবহার করা যাবে কিনা তা মূল্যায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ডব্লিউএইচও। ধারণা করা হয়েছিল এপ্রিলের আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে না।
জরুরি ব্যবহার অনুমোদন পাওয়া ডব্লিউএইচও'র কোভ্যাক্স প্রকল্পে থাকার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় কোভিড-১৯ এর ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডোজ নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডব্লিওএইচও এরমধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ও জনসন অ্যান্ড জনসন কে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
কোভ্যাক্স উদ্যোগে ১০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দিবে বলে জানিয়েছে চীন। চায় বলে আবেদন জানায়। এর মধ্যে তিন লাখ ডোজ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে, বিশেষত আফ্রিকা অঞ্চলে যেসব কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন তাদেরকে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।
যদিও সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের কার্যকারতার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে চীনে অনেক আগেই ভ্যাকসিন দুটি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে কোম্পানি দুটি। আগামী জুনের মধ্যেই তারা নিজেদের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে ভ্যাকসিন দেয়ার টার্গেট নিয়েছে।
সিনোফার্ম নিজস্ব বিশ্লেষণের সূত্রে জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ৭৯ শতাংশ কার্যকরী। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত ধাপে এটি ইতোমধ্যেই আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোসহ ৩০ টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে।
সিনোফার্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের প্রধান বিজ্ঞানী ঝ্যাং উনতাও গত মাসে বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বিরুদ্ধে পূর্ণ কার্যকারিতার জন্যে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ প্রয়োজন হবে কিনা তা বুঝতে হলে কোম্পানির বিদেশে ট্রায়ালের ফলাফল মূল্যায়ন করতে হবে।
এদিকে ব্রাজিল, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ায় সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ৫০ শতাংশ থেকে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এপর্যন্ত ২০টি দেশে ভ্যাকসিনটি অনুমোদন পেয়েছে।
দুই ডোজের এই দুটি চীনা ভ্যাকসিনই সাধারণ ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে ভ্যাকসিন দুটির সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থাও তুলনামূলক সহজ।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, চীনা কোম্পানি ক্যানসিনো বায়োলজিকসের উৎপাদিত এক ডোজের ভ্যাকসিটি দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই কার্যকারিতার হার ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি জানায়, চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালের বিশ্লেষণে তারা ৬৫ শতাংশের বেশি কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছে।
ক্যানসিনোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঝু তাও বুধবার এক অনলাইন প্রেজেন্টেশনে বলেন, প্রথম ডোজের ছয় মাস পরে আরেকটি বুস্টার শট দেওয়া হলে শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ ৭ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে যা ভ্যাকসিনের কর্মক্ষমতাকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম। তবে এর জন্যে আরও বেশি ক্লিনিক্যাল ডেটা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট