বেজোস ও মাস্কের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্লাবে যোগ দিলেন মুকেশ আম্বানি
ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বের শত বিলিয়ন ডলার ক্লাবের ১১ তম সদস্য হিসেবে যুক্ত হলো মুকেশ আম্বানির নাম।
শুক্রবার মুকেশ আম্বানির প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে, বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১০০.৬ বিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে চলতি বছর তার সম্পদ ২৩.৮ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক তেল পরিশোধন ও পেট্রোলিয়াম ব্যবসার দায়িত্ব পান মুকেশ আম্বানি। ৬৪ বছর বয়সী আম্বান জ্বালানি নির্ভর এই কংগ্লোমারেটকে রিটেইল, প্রযুক্তি খাত ও ই-কমার্সে রূপান্তরের দিকে ঝুঁকছেন।
২০১৬ সালে টেলিকমিউনিকেশন ব্যবসা শুরু করেন আম্বানি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রিলায়েন্সের টেলিকম খাত ভারতের বাজারে শীর্ষস্থান দখল করেছে। গত বছর ফেসবুক, গুগল থেকে শুরু করে কেকেআর অ্যান্ড কোং এবং সিলভার লেকের কাছে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে রিটেইল ব্যবসা ও প্রযুক্তি খাত থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলার উত্তোলন করে তার প্রতিষ্ঠান।
চলতি বছর জুনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে নজর দেন মুকেশ আম্বানি। তিন বছরে এই খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। আম্বানি জানান তার প্রতিষ্ঠান কম খরচে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন শুরু করবে।
ভারতকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই বিনিয়োগ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পাশাপাশি বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে ভারতের জ্বালানি আমদানি কমানোর লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে ঝুঁকছে ভারত।
রিলায়েন্সকে রক্ষা করতেই জ্বালানি তেলের নির্ভরতা কমিয়ে আম্বানি প্রতিষ্ঠানকে বহুমুখী করার চেষ্টা করছেন বলেই ধারণা করছেন অনেকে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত জৈব জ্বালানি রিলায়েন্সের ব্যবসায়িক খাতে মূল ভূমিকা পালন করছে। রিলায়েন্সের ৭৩ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে জ্বালানি তেল থেকে। অয়েল-টু-কেমিক্যালস ব্যবসাকে এখন পৃথক খাতেই রাখছে রিলায়েন্স। শোনা যাচ্ছে, এই খাতে সৌদি আরাবিয়ান অয়েল কোংও বিনিয়োগ করতে চলেছে।
মুম্বাইয়ের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান টিসিজির প্রধান ইনভেস্টমেন্ট অফিসার চাকরি লোকপ্রিয় বলেন, "প্রযুক্তির উত্থানকে সামনে রেখেই মুকেশ আম্বানি নতুন ব্যবসা বিস্তারের পরিকল্পনা করছেন। বৃহৎ পরিসরে দ্রুতগতিতে বাণিজ্য বিস্তারের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। কিন্তু, আম্বানি তার দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।"
১৯৬০ সালে ধীরুভাই আম্বানির হাত ধরে রিলায়েন্সের যাত্রা শুরু। ইয়েমেনে গ্যাস স্টেশনে অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন ধীরুভাই। পরবর্তীতে ভারতে ফিরে পলিয়েস্টার সুতার ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তার ব্যবসার প্রসার ঘটে।
২০০২ সালে মারা যান ধীরুভাই। সে সময় তিনি সন্তানদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করে যেতে পারেননি। ফলে, সম্পত্তি নিয়ে তার দুই পুত্র মুকেশ ও অনিল আম্বানির মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। ২০০৫ সালে ধীরভাই আম্বানির স্ত্রী কোকিলাবেন তার দুই পুত্রের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করেন।
বণ্টন চুক্তি অনুসারে, মুকেশ পান তেল পরিশোধন ও পেট্রোলিয়াম ব্যবসার দায়িত্ব। অন্যদিকে, অনিল আম্বানি বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন, আর্থিক পরিষেবা এবং টেলিকমিউনিকেশন সেবার মতো নতুন খাতগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এক সময়ের বিলিয়নিয়ার অনিল আম্বানি গত বছর লন্ডনের এক আদালতে তার সম্পদের নেট মূল্য শূন্য ঘোষণা করেন।
চলতি বছর ভারতের আরেক ধনকুবের গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণও ৩৯.৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। কয়লানির্ভর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির আদানি গ্রুপ নিয়ে গৌতম আদানি ভারতের দ্বিতীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি। ভারতের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন প্রযুক্তিখাতের টাইকুন আজিম প্রেমজি। চলতি বছর তার সম্পদ বেড়েছে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার।
- সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস