ভারতে অক্টোবরেই কোভিডের থার্ড ওয়েভের সংক্রমণ শুরু হতে পারে: বিশেষজ্ঞ জরিপ
আগামী অক্টোবরের মধ্যে ভারতে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ওয়েভের সংক্রমণ শুরু হতে পারে। সাম্প্রতিক সংক্রমণের চেয়ে তৃতীয় ওয়েভ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তবে তারপরও আরও অন্তত এক বছর এই মহামারি জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবেই রয়ে যাবে। মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের পরিচালিত সাম্প্রতিক পোলের ফলাফল থেকে এসব জানা যায়।
জুনের ৩-১৭ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তের ৪০ জন স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, ভাইরোলজিস্ট, মহামারিবিদ ও অধ্যাপকদের নিয়ে চালানো এ জরিপের ফলাফলে নতুন ওয়েভের সংক্রমণের ভয়াবহতা কমাতে টিকাদানের ওপর গুরূত্বারোপ করা হয়।
অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের ৮৫ শতাংশ বা প্রতি ২৪ জনে ২১ জনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী অক্টোবরের মধ্যে ভারতে নতুন ওয়েভের সংক্রমণ শুরু হবে, ২৪ জনের বাকি তিনজনের মতে এর আরও আগে, সেপ্টেম্বরেই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। ১২ শতাংশের পূর্বাভাস অনুযায়ী সংক্রমণ শুরু হবে আগস্টে। বাকি ৩ শতাংশ বিশেষজ্ঞ বলছেন, নভেম্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশটিতে নতুন ওয়েভের সংক্রমণ শুরু হবে।
তবে ৭০ শতাংশের বেশি বিশেষজ্ঞ, বা ৩৪ জনে ২৪ জন বলছেন, নতুন ওয়েভের সংক্রমণ চলতি ওয়েভের চেয়ে ভালোভাবে সামলানো যাবে।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (এআইআইএমএস) পরিচালক ডা. রানদ্বীপ গুলেরিয়া এবিষয়ে বলেন, "আরও বেশি মানুষ টিকাদানের আওতায় আসায় এবং চলতি সংক্রমণের ফলে অনেকেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হওয়ায় আসন্ন ওয়েভের সংক্রমণ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে,"
এখন পর্যন্ত ভারতের টিকা নেওয়ার উপযুক্ত প্রায় ৯৫ কোটি জনসংখ্যার ৫ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আরও কোটি কোটি মানুষ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন।
বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পূর্বাভাস বলছে, দেশটিতে এ বছরই টিকাদান কার্যক্রম জোরদার হবে, তবে সেইসঙ্গে এখনই সতর্কতামূলক বিধি-নিষেধ তুলে না নেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তারা।
আসন্ন তৃতীয় ওয়েভের সংক্রমণে শিশু ও ১৮ বছরের কম বয়সীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৪০ জনের ২৬ জন বিশেষজ্ঞ।
ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সের (এনআইএমএইচএএনএস) মহামারিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডা. প্রদ্বীপ বানাদুর বলেন, "এই জনগোষ্ঠীকে একেবারেই টিকার আওতায় আনা হয়নি, তাদের জন্য এখনো কোনো ভ্যাকসিন বরাদ্দও নেই। একারণেই তাদের ঝুঁকি বেশি,"
এক্ষেত্রে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
নারায়ণা হেলথের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কর্ণাটক রাজ্য সরকারের মহামারি প্রস্তুতি পরিকল্পনার পরামর্শক ডা. দেবী শেঠি বলেন, "আমরা প্রস্তুত না থাকা অবস্থাতেই যদি অধিক সংখ্যক শিশু আক্রান্ত হওয়া শুরু করে, শেষ মুহূর্তে আমাদের আর করার কিছুই থাকবে না,"
"এমনটা হলে পরিস্থিতি একেবারেই বদলে যাবে। দেশে শিশুদের জন্য খুবই অল্প সংখ্যক আইসিইউ শয্যা আছে। এমন কিছু হলে মহা দুর্যোগ নেমে আসবে," বলেন তিনি।
তবে বাকি ১৪ জন বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা খুব বেশি ঝুঁকিতে নেই।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৮ জনের ২৫ জন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও ভ্যাকসিন সুরক্ষা দিবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে ৩০ জন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ভারতে অন্তত আরও এক বছরের জন্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে থাকবে এ মহামারি।
১১ জনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরও ১ বছর এই ঝুঁকি থাকবে, ১৫ জন বলছেন দুই বছর , ১৩ জন জানিয়েছেন এমন ঝুঁকি আরও দুই বছরের বেশি সময় থাকবে। বাকি দুইজনের মতে, কখনোই এ ঝুঁকি যাবে না।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান ভাইরোলজির পরিচালক ও গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্কের আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা রবার্ট গ্যালো এব্যাপারে বলেন, "কোভিড-১৯ সৃষ্ট সংকট সমাধানযোগ্য। কারণ খুব সহজেই এর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে। টিকাদান ও আক্রান্ত হওয়ার ফলে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে দুই বছরের মধ্যেই ভারতে হার্ড ইম্যিউনিটি অর্জন হবে।"
- সূত্র: রয়টার্স