ভারতে কমছে মোদির জনপ্রিয়তা, আবারও একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড
ভারতে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৪ হাজার ৫২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৪ জন। এদিকে জরিপ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার রেটিংও কমে গেছে।
এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি্তে সর্বমোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন। সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসাব অনুযায়ী ভারতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৮৩,২৪৮ জন।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবিলা করতে এখনো সংগ্রাম করে চলেছে ভারত। 'মর্নিং কনসাল্ট' নামে ডেটা ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি ডজনখানেক বিশ্ব নেতার রেটিং-এর উপর নজর রাখছে এবং সেখানে এ সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদির অবস্থান ৬৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ ফার্মটি তার জনপ্রিয়তা ট্র্যাকিং করতে শুরু করার পর থেকে এটিই মোদির সর্বনিম্ন রেটিং।
প্রথমে ২০১৪ ও পরে ২০১৯ সালে নির্বাচিত হয়ে ভারতের ক্ষমতায় আসেন মোদি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোদির প্রাপ্ত আসনসংখ্যা বিগত ৩০ বছরে অন্য যেকোনো ভারতীয় নেতার চাইতে বেশি ছিল। হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে মোদির অত্যন্ত শক্তিশালী ইমেজ রয়েছে।
কিন্তু এ সপ্তাহে ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার পর মহামারি মোকাবিলায় মোদির প্রস্তুতির অভাব প্রতীয়মান এবং সেই সাথে মোদির জনসমর্থনের ভিত্তিও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে বলে জানায় মর্নিং কনসাল্ট।
এপ্রিলে মোদির নেট অনুমোদন ২২ পয়েন্ট কমে যাওয়ার পর তার জনপ্রিয়তা কমেছে সবচেয়ে বেশি। নয়াদিল্লির মতো শহুরে অঞ্চলগুলোতে মহামারির তীব্র আক্রমণ, হাসপাতালে শয্যার অভাব, অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালের বাইরে, পার্কিং লটে মানুষ মারা যাওয়ার মত বিপর্যয়ের কারণেই মোদির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।
মর্গ ও শ্মশানগুলোতেও দেখা যাচ্ছে লাশের স্তূপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি অব্যবস্থাপনার ফলে জনদুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের মাত্রাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, ভারতের পশ্চাৎপদ ও দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরো দুর্বল হওয়ায় ভাইরাসের আঘাত হানা কমেনি।
বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির নেতা পি চিদাম্বরাম বলেন, 'ভারতের মানুষ এখন শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে তাদের নিজেদের জীবন বাঁচাতে এখন শুধু নিজের, পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের উপরেই নির্ভর করতে হবে। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ।'
কিন্তু মোদি সরকার জানিয়েছে, তারা ভাইরাস মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের মত বিপর্যয় 'এক শতাব্দীতে একবার আসে' বলে উল্লেখ করেছে তারা।
পোলিং এজেন্সি 'ইউগভ' এ মাসে শহুরে ভারতীয়দের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের আত্মবিশ্বাস কমতে শুরু করেছে।
এপ্রিলে এসে মাত্র ৫৯ শতাংশ ভারতীয় মনে করে যে সরকার করোনা সংকটকে 'খুব ভাল অথবা মোটামুটি ভাল'ভাবেই মোকাবিলা করছে। যদিও প্রথম তরঙ্গের সময়ে এই বিশ্বাসীদের সংখ্যাটা ছিল ৮৯ শতাংশ।
তবে যত সমালোচনাই হোক না কেন, ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত মোদিকে জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিরোধী দলগুলোকে এখনো মোদির সর্বময় কর্তৃত্বকে বাধা দিতে চাইলে পর্বতসম চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে হবে।
- সূত্র: আল-জাজিরা