ভ্যাকসিন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলছে রাশিয়া
মাত্র দুই মাস গবেষণা এবং পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরই স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ প্রতিরোধী স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনের ব্যবহার অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। এ নিয়ে বিশ্বের নানা দেশের চিকিৎসা, ওষুধ এবং প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞরা তীব্র উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন তারা। জানিয়েছেন সম্ভাব্য ক্ষতিকর পার্শ্বঃপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের ভয়ের কথাও।
তবে রাশিয়া স্পুটনিক-ভি এর সুরক্ষা নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনা নাকচ করে বলেছে, তাদের উৎপাদিত এ প্রতিষেধক নিয়ে ''সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন'' সব কথা বলা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিনটি জনসাধারণের মাঝে প্রয়োগের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেয় রাশিয়া। এরপরই দ্রুতগতিতে রুশ প্রতিষেধকের উন্নয়ন ও পরীক্ষার ত্রুটি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন পশ্চিমের নানা দেশের বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির।
প্রতিষেধকটি টিকা হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে; জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ পশ্চিমা রাষ্ট্র।
এসব কিছুর প্রেক্ষিতে আজ বুধবার (১২ আগস্ট) রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেন, ''রাশিয়ার তৈরি প্রতিষেধকটির প্রতিযোগী সম্ভাবনা অনুমান করেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ মহল এমন সব প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে…যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।''
তিনি এও জানান, খুব শীঘ্রই অনুমোদনপ্রাপ্ত ভ্যাকসিনটি বাজারে ছাড়বে রাশিয়া।
''আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিনটির প্রথম চালান ছাড়া হবে। প্রথমে শুধু চিকিৎসকরা এটি পাবেন,'' বলছিলেন রুশ মন্ত্রী।
বৈশ্বিক সমালোচনার তোয়াক্কা না করেই রুশ কর্মকর্তারা আগামী অক্টোবর নাগাদ স্পুটনিক-ভি ব্যাপকভাবে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার ভ্যাকসিনের অনুমোদনের ঘোষণাটি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সমস্ত নিরাপত্তা পরীক্ষা করেই এটির অনুমোদন দেওয়ার দাবি করেন তিনি। জানান নিজের এক কন্যার ভ্যাকসিন নেওয়ার কথাও।
তবে রুশ ভ্যাকসিন নিয়ে সতর্ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, তারা রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচিত প্রতিষেধকটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য, ভ্যাকসিন পরীক্ষার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় স্তরে যে ৬টি ভ্যাকসিন প্রার্থীকে হু' অন্তর্ভুক্ত করেছে, তার মধ্যে স্পুটনিক-ভি নেই। মানবদেহে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা পরীক্ষায় এটি অপরিহার্য এক পদক্ষেপ। তবে দ্বিতীয় স্তরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরই স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া:
অতি দ্রুততার সঙ্গে ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্পাহন এটি সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ''এভাবে লাখ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা হবে বিপদজনক। কারণ ভুলত্রুটি কিছু হয়ে থাকলে ভ্যাকসিনটি গ্রহণকারীদের অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন।
''এ পর্যন্ত আমরা যা জানি; তাতে বোঝা যায় ভ্যাকসিনটি যথেষ্ট পরীক্ষা না করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যে কোনো পন্থায় সবার আগে ভ্যাকসিন তৈরিটা আসল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয়। বরং সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত একটি ভ্যাকসিন আনাটাই এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাওয়া উচিৎ,'' যোগ করেন তিনি।
ইউরোপের আরেক দেশ, ফ্রান্সের মার্সেই শহরে অবস্থিত জাতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ইসাবেল ইমবের্ত- এর মতে অতিদ্রুত একটি আরোগ্য নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
লে প্যারিসিঁয়া দৈনিককে তিনি জানিয়েছেন, ''এটি তৈরির প্রক্রিয়া বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল সম্পর্কে আমরা জানিনা। তাই চোখ বন্ধ করে করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক জীবাণু প্রতিরোধে রুশ ভ্যাকসিনটির উপর আস্থা রাখা সম্ভব নয়।''
যুক্তরাষ্ট্রেও দেশটির শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডক্টর অ্যান্থনি ফসি রাশিয়ার দাবি নিয়ে তার সন্দেহের কথা জানিয়েছেন।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ''ভ্যাকসিনটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কার্যকর- রুশ বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে তা প্রমাণ করেছেন বলে আমি আশা করছি। তবে আমার দৃঢ় সন্দেহ তারা এমনটা করতে পারেননি।