ভ্যাকসিন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
রাশিয়ার তৈরি 'স্পুটনিক- ভি' ভ্যাক্সিন নিয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
গত সপ্তাহে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভ্যাকসিন নিবন্ধনের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষার স্তর পার করার আগেই এই ঘোষণা আসে। দাবী করা হয় ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। তবে এর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সরবরাহ করা হয়নি।
ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের পর গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেয়া হয়, ভ্যাকসিনটির বড় পর্যায়ে টেস্টিং এর জন্য বিদেশি গবেষকদের সমন্বয়ে ৪০ হাজার মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা ক্যাথেরিন স্মলউড জানান, ভ্যাকসিন সম্বন্ধীয় বিভিন্ন ধাপ ও প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি নিয়ে রাশিয়ার সাথে আলোচনা করছে সংস্থাটি।
তিনি বলেন, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রাশিয়ার সম্ভাব্য টিকা কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।'
সংস্থাটির ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক হ্যানস ক্লুগ বলেন, 'সম্ভাব্য যেকোনো ভ্যাকসিনই আশার আলো দেখায়। তবে এর অনুমোদনের জন্য সব ভ্যাকসিনকেই সঠিকভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ইউরোপের দেশগুলো বর্তমানে কোভিড-১৯ সম্বন্ধীয় প্রয়োজনীয় তথ্য ও সতর্ক ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় কঠোর লকডাউন ছাড়াই মহামারি মোকাবেলা করতে পারবে।'
ক্লুগ সাংবাদিকদের বলেন, 'দেশজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে আমরা আগের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। অর্থনীতিকে সচল রেখে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই আমরা এই ভাইরাস মোকাবেলা করতে পারবো।'
নিউ ইয়র্ক টাইমসের গত বুধবারের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় প্লাজমার ব্যবহার স্থগিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলেন 'এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমি প্লাজমা চিকিৎসার কার্যকর প্রতিক্রিয়া আছে শুনেছি।'
বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা দ্রুতগতিতে ভ্যাক্সিন অনুমোদন দেয়া এবং প্রমাণ ছাড়া বিভিন্ন চিকিৎসা চালানোর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ইতোপূর্বেও ট্রাম্প করোনাভাইরাস চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ব্লিচসহ বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
দিল্লির রাজ্য সরকারের চালানো একটি জরিপের পর, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দিল্লির ৩০ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জেইন বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, 'আমরা দেখেছি দিল্লির ২৯.১ শতাংশ মানুষের দেহে এন্টিবডি আছে। অর্থাৎ তারা আক্রান্ত হয়ে সেরেও উঠেছেন।'
দিল্লির জনসংখ্যা প্রায় ২০ মিলিয়ন এবং এপর্যন্ত রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪০,৭৬৭। এই জরিপের ফলাফলের সাথে মুম্বাই ও পুনের ফলাফলেরও সাদৃশ্য আছে।
আক্রান্তের সংখ্যায় এশিয়ার মধ্যে ভারতের স্থান প্রথম, এছাড়াও বিশ্বের সর্বাধিক আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় ভারতের স্থান তৃতীয়।
এদিকে বেলজিয়াম ঘোষণা দিয়েছে, তারা ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সোফি উইলমেস বলেন, 'দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ রোধ করাই আমাদের লক্ষ্য। তবে আমাদের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ।'
সম্প্রতি বেলজিয়ামের নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদর দফতর ও দেশটির রাজধানী ব্রাসেলসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের সর্বাধিক মৃত্যহারের দেশগুলোর মধ্যে আছে বেলজিয়াম। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৯,৯৫৯।