মহাকাশ ঘুরে ৩ দিন পর চার মহাকাশচারী ফিরলেন পৃথিবীতে
মহাকাশ ভ্রমণ শেষে তিনদিন পর সফলভাবে পৃথিবীতে অবরতণ করলেন চার শখের নভোচারী। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করেন তারা।
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী সর্বপ্রথম বেসামরিক দল ছিল এটি।
ইনস্পিরেশন-৪ এর ক্রুরা গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডা থেকে একটি স্পেসএক্স ক্যাপসুলের মাধ্যমে মহাকাশে পাড়ি জমায়।
আটলান্টিকের পানিতে নেমে আসার আগে চারটি প্যারাসুটের কারণে ক্যাপসুলের গতি কমে আসতে থাকে। এছাড়া, তাদেরকে উদ্ধারে সেখানে ছুটে যায় স্পেসএক্সের নৌকাগুলো।
ইনস্পিরেশন-৪ দলের নেতৃত্বে ছিলেন ই-কমার্স ফার্ম শিফট-ফর-পেমেন্টস ইনকর্পোরেশন এর প্রধান নির্বাহী বিলিয়নিয়ার জ্যারেড আইজাকম্যান। এ অভিযানের মিশন "কমান্ডার" হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
টাইম ম্যাগাজিনের অনুমান, তিনি ক্রু ড্রাগনে চারটি আসনের জন্য আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন ডলার (১৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড) খরচ করেছেন।
আইজাকম্যানের সাথে তারই নির্বাচিত তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি যোগ দিয়েছিলেন এ অভিযানে। তারা হলেন, ৫১ বছর বয়সী ভূ -বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন নাসা নভোচারী প্রার্থী সিয়ান প্রক্টর; চিকিৎসকের সহকারী এবং শৈশবে হাড়ের ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া ২৯ বছর বয়সী হেইলি আর্সেনউক্স; এবং ৪২ বছর বয়সী মহাকাশ তথ্য প্রকৌশলী ও বিমান বাহিনীর অভিজ্ঞ ক্রিস সেমব্রস্কি।
নভোচারীরা যাত্রার আগে স্পেসএক্স পরিচালিত ৬ মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
অবতরণের কিছুক্ষণ পর আইজ্যাকম্যান রেডিওবার্তায় বলেন, "এটি আমাদের জন্য এক দুর্দান্ত ভ্রমণ ছিল।"
তাদের এ সফরের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো এলন মাস্কের কোম্পানি সফলভাবে মানুষের মহাকাশ অভিযান চালালো। এটি মহাকাশ পর্যটন বাজারে আরেকটি মাইলফলক।
নভোচারীদের নিরাপদ অবতরণের পর এলন টুইট করেন, "অভিনন্দন ইনস্পিরেশন ৪এক্স!!!"
এদিকে, মিশনের পরিচালক টড এরিকসন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "মহাকাশ ভ্রমণ সাধারণ নারী-পুরুষের জন্য অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় মহাকাশ যুগে আপনাদেরকে স্বাগতম।"
রকেটে থাকা কম্পিউটার সিস্টেমগুলোর মাধ্যমে যাত্রার সময় ড্রাগন ক্যাপসুল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ক্যাপসুলটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল, যাতে ৫৭৫ কিলোমিটার (৩৬০ মাইল) উচ্চতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত সেটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) কাছাকাছি যেতে না পারে।
তাদের এ অভিযানে প্রতিদিন ১৫ –এরও বেশি বার তারা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছেন।
ভ্রমণের সময় তাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, ঘুম, জ্ঞান সম্বন্ধীয় ক্ষমতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের তথ্য সংগ্রহ করেন বিশেষজ্ঞরা। মহাকাশে থাকাকালীন সময়ে অ-পেশাদার নভোচারীদের উপর কী প্রভাব পড়ে তা গবেষণার জন্য নেওয়া হয় এসকল তথ্য।
নভোচারীদের এ ভ্রমণ টেনেসির সেন্ট জুডস চিলড্রেনস রিসার্চ হাসপাতালের জন্য তহবিল সংগ্রহ করবে। এ হাসপাতালেই দলটির সদস্য হেইলে আর্সেনো তার ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বর্তমানে এখানেই তিনি কর্মরত আছেন।
এছাড়া, তারা মহাকাশে যেসকল জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন সেগুলোও নিলামে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এসব জিনিসের মধ্যে রয়েছে একটি উকুলেলেও।
তবে, বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ ভ্রমণের এ বাজারে এলন মাস্কের পাশাপাশি আরও রয়েছেন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন এবং জেফ বেজোস। তারা উভয়েই এ বছর তাদের নিজস্ব মহাকাশ যানে করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে ভ্রমণ করেছেন।
- সূত্র- বিবিসি