মহামারিতে চাঙা ব্যবসা, ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় মর্ডানার তিন মালিক
করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মর্ডানার তিন মালিক নাম লিখিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ৪০০ জন ধনী ব্যক্তির তালিকায়।
আমেরিকার অন্যতম বায়োটেক কোম্পানি মডার্নার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নোবার আফিয়ান, বোর্ড সদস্য ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ল্যাঙ্গার এবং বিনিয়োগকারী টিমোথি স্প্রিংজার প্রত্যেকেই এ বছর ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফোর্বস প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তির তালিকায় নতুন মুখ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
ফোবর্সের প্রকাশনা অনুসারে, ব্যবসায়-বাণিজ্যের উপর করোনা মহামারির আঘাত সত্ত্বেও, এই বছর ৪০০ জন ধনী আমেরিকান একসঙ্গে গত বছরের অতি ধনীদের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এ তালিকায় ২০০৭ সালের পর এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি নতুন নাম উঠে এসেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই অর্থ, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবসায় করে হয়েছেন নতুন ধনকুবের।
মর্ডানার ত্রয়ীদের প্রত্যেকেই বায়োটেক কোম্পানিতে অংশীদারিত্বের মালিক। গত বছর বিশ্বে করোনা প্রকোপ যত বেড়েছে মার্কিন ড্রাগ জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মান বায়োটেকের সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা টিকা বিক্রির মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামিয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসন এবং ইউরোপের অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, মহামারি চলাকালীন তারা তাদের উৎপাদিত টিকা থেকে কোনো লাভের পরিকল্পনা করছে না।
ফোর্বসের তথ্যমতে, মডার্নার চেয়ারম্যান আফিয়ানের সম্পদের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলার। প্রকৌশলী আফিয়ান, আর্মেনিয়ান পিতামাতার ঘরে বৈরুত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ছেড়ে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। মর্ডানা ছাড়াও আরও অনেক কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন আফিয়ান।
মঙ্গলবার ফোর্বসের প্রতিবেদনে আরও অনুমান করা হয়, মর্ডানার আরেক অংশীদার এমআইটি বিজ্ঞানী ল্যাঙ্গারের সম্পদের পরিমান ৪.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এছাড়া, তৃতীয় অংশীদার হার্ভার্ডের ইমিউনোলজিস্ট স্প্রিংজারের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৯ বিলিয়ন ডলারে। ২০১০ সালে যখন মর্ডানা প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তিনি কোম্পানিতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
এদিকে, ফোবর্সের এই বছরের তালিকা থেকে বেশ কিছু পরিচিত নাম বাদ পড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টানা ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ বছর ফোবর্সের তালিকা থেকে পড়েছেন। জানা গেছে, মহামারির প্রভাবে তার অনেক সম্পদের মূল্য কমে গেছে।
টানা চার বছর ধরে তালিকার শীর্ষে আছেন অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন টেসলার এলন মাস্ক।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারের ফলে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছে, সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ বাড়িয়েছেন। এই মহামারি কেবল সম্পদের ক্ষেত্রে নয়, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে।
গত বছর অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত মডার্নার ১৫২ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাওয়া তিনটি করোনা টিকার মধ্যে এটি একটি; এছাড়া, ইউরোপীয় দেশগুলোতে এবং কানাডাতেও টিকা বিক্রি করছে মর্ডানার।
টিকার পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী যে বৈষম্য দেখা দিয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে, মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফেন ব্যানসেল বলেছেন, তিনি আশা করছেন খুব দ্রুতই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে; ফলে, আগামী বছর নাগাদ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে টিকার সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।